চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই এ বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৬৩ জন, আহত হয়েছেন ৪১৯ জন।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, গর্তে আটকে দীর্ঘ যানজট
দীর্ঘদিন ধরে বেহাল খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চিত্র আরও করুণ হয়ে উঠেছে সম্প্রতি। খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে চুকনগর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে অন্তত ডজনখানেক স্থানে বড় বড় গর্ত, ভেঙে যাওয়া পিচ ও ধসে পড়া অংশে যানবাহন চলছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটির চুকনগর থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত আরও অন্তত ৬টি স্থানে একই রকম অবস্থা। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরগামী এ মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন পরিবহন চালকরা।
খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের একজন ট্রাকচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন পণ্য নিয়ে যেতে হয়। কোনো অংশে গিয়ে ট্রাক দুলে পড়ে যায়, আবার কোথাও গর্তে আটকে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শুধু আমাদের ক্ষতি না, ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন কর্দমাক্ত গ্রামীণ পথ
যশোরের নওয়াপাড়া এলাকায় অন্তত ২ কিলোমিটার সড়ক বর্ষায় মাটির রাস্তায় রূপ নিয়েছে। সেইসঙ্গে পুরো সড়কে কোথাও ছোট-বড় গর্ত, কোথাও উঠে যাওয়া পিচ সব মিলিয়ে বিপজ্জনক পথযাত্রা।
বাসচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নওয়াপাড়া পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে গেলেই মনে হয় বাসটা আর ফিরবে না। সাসপেনশন, চাকাও নষ্ট হয় প্রায়ই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে।’ নওয়াপাড়া থেকে খুলনা পর্যন্ত যাত্রী তানজিলা পারভীন বলেন, ‘বাসের মধ্যে বসেই মনে হয় কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাব। আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়।’
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, ঘটছে দুর্ঘটনা
ঝিনাইদহ-যশোর ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক: মৃত্যুফাঁদ
ঝিনাইদহের তেঁতুলতলা, বিষয়খালী, ভুটিয়ারগাতী এবং কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া, আলামপুর ও লক্ষীপুর সড়কে বিশাল গর্ত আর উঠে যাওয়া পিচে সৃষ্ট ফাঁকা জায়গা যেন দুর্ঘটনার ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ঝিনাইদহের বাস চালক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘চলাচলের মতো অবস্থা নাই। বড় গর্ত দেখে বাস থামাতে গেলে পেছন থেকে আরেকটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়। অনেক সময় যাত্রী রাগারাগি করে, কিন্তু আমরা কি করবো?’
ছয় মাসে ৩৬৩ জনের প্রাণহানি, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে দুর্ঘটনা
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩৪৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪১৯ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কের এ অবনতি যানবাহনের ক্ষতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও মানুষের দুর্ভোগ ছাড়াও জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
‘স্থায়ী সমাধান কংক্রিট সড়ক’: সড়ক বিভাগের দাবি
খুলনা জোন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা আসলে সিজনের সাথে সাথে আমাদের মেইনটেইনের ওয়ার্কের অপশনটা চেঞ্জ করি। যেমন বৃষ্টির সময় যখন সার্ফেসটা অনেক খারাপ, অনেক বড় বড় গর্ত হয়ে যায়, বৃষ্টির সময় বিটুমিন দিয়ে কাজ করার কোনো ওয়ে নেই। সেখানে আমরা ইটের এইচবিবি করে দেই এবং টেকসই হয়, যদিও কমফোর্টেবল জার্নি থাকে না, বাট এটলিস্ট পাসেবল থাকে, ভালো পাসেবল থাকে। আমাদের প্রত্যেকটা রাস্তার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে কংক্রিটের রাস্তা। যেটাকে বলি সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে আমরা করি, সেটা করার জন্য আমাদের অলরেডি অনেক প্রপোজাল আছে, প্ল্যান আছে, যেগুলো আমরা এই বছরই এক্সিকিউট করব, এই কাজগুলো যখন হয়ে যাবে, তখন কিন্তু এই রাস্তার মেজর সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহের মহাসড়কে অবাধে অবৈধ যান, হরহামেশাই যাচ্ছে প্রাণ
তবে স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিশ্রুতি বহুবার শুনেছেন, বাস্তবায়ন এখনও চোখে পড়েনি।
টেকসই ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন শুধু কাগজে থাকবে। অবিলম্বে সড়কগুলোর আধুনিকায়ন ও বাস্তব সংস্কার কাজ শুরু না হলে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি প্রতিদিনের বাস্তবতায় পরিণত হবে।