খুলনাঞ্চলের কাঁচা পাট রফতানিতে স্থবিরতা

১ সপ্তাহে আগে
কাঁচাপাটকে শর্তযুক্ত রফতানি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পরিপত্র জারি করায় বিপাকে পড়েছেন খুলনা অঞ্চলের পাট রফতানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এছাড়া প্রায় তিন মাস ধরে স্থল বন্দর দিয়ে বন্ধ রয়েছে ভারতে কাঁচা পাট রফতানি। ফলে এ অঞ্চল থেকে রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। আর কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় শ্রমিকরা।

দেশের কাঁচা পাট রফতানির অন্যতম অঞ্চল খুলনার দৌলতপুর। বছরের এই সময়ে দৌলতপুরের গোডাউনগুলোতে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ গোডাউনে সুনসান নীরবতা। গত দুই দিনে একাধিক গোউাউন ঘুরে দেখা গেছে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে আছে কার্যক্রম। কিছু কিছু গোডাউনে কৃষকের থেকে ক্রয় করা কাঁচা পাট গোডাউনে জমা করতে দেখা গেলেও কোনো গোডাউন থেকেই কাঁচা পাট বের হয়নি রফতানির জন্য।
 

মূলত গত ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে স্থবিরতা দেখা খুলনা অঞ্চলের কাঁচা পাট রফতানি খাতে। এই পরিপত্রে বলা হয়, কাঁচা পাট এখন থেকে শর্তযুক্ত পণ্য। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি ও শর্ত মেনেই কাঁচা পাট রফতানি করতে হবে। রফতানিকারকরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে কাঁচা পাট রফতানি বাস্তবে অসম্ভব। খুলনার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যও বলছে একই কথা। গত ১৫ দিনে কাঁচা পাট রফতানির জন্য কোনো সার্টিফিকেট ইস্যু হয়নি এ দফতর থেকে।
 

আরও পড়ুন: তবুও আশায় বুক বাঁধছেন খুলনার পাটশ্রমিকরা!


শুধু এই জটিলতাই নয়, গত তিন মাসে খুলনা অঞ্চল থেকে কাঁচা পাট রফতানি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। খুলনা অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি কাঁচা পাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হতো। তবে গত ২৭ জুন ভারত স্থল বন্দর দিয়ে কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে গত তিন মাসে তার আগের তিন মাসের তুলনায় রফতানি কমে এসেছে ৮০ শতাংশে।  

 

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত যেখানে ৫৭০টি সার্টিফিকেটের বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছিল তিন কোটি ৬৬ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, সেখানে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয় নেমে এসেছে মাত্র ৪২ লাখ ২৭ হাজার ২০০ ডলারে। ওই সময়ে সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছে মাত্র ৯২টি।
 

সব মিলিয়ে এ খাত মারাত্মক ধাক্কায় পড়েছে। ফলে এ অঞ্চল থেকে কাঁচা পাট রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন রফতানিকারকরা। ব্যবসায়ীদের মতে, রফতানি না থাকায় একদিকে তাদের বিনিয়োগ আটকে আছে, অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজারো শ্রমিক।
 

গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী গাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েক দশক ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনি, হাজারো শ্রমিককে কর্মসংস্থান করে দেই। কিন্তু হঠাৎ করে কাঁচা পাটকে শর্তযুক্ত রফতানি তালিকায় ফেলার ফলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। অনুমতি সাপেক্ষে রফতানি করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থা চলতে থাকলে শুধু ব্যবসা নয়, গোটা শিল্প খাতই ধসে পড়বে। শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে, কৃষকরা তাদের পাট বিক্রি করতে পারবে না, আর আমরা ব্যবসায়ীরা ঋণ শোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে পড়ব।’

আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়াতে খাবি খাচ্ছে খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলো

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শরীফ মো. শহীদুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে জুট এক্সপোর্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিনিয়োগ, ব্যাংক ঋণ এবং শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও আর নেই। সরকার যদি দ্রুত এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে তবে শুধু ব্যবসায়ী নয়, কৃষক থেকে শ্রমিক—সবার জীবিকা ঝুঁকিতে পড়বে। আমাদের আশঙ্কা, পুরো শিল্পটাই একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা চাই সরকার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করুক। 

 

গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী গাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’
 

শ্রমিকদের চোখে গোডাউন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা। রফতানি না থাকায় খুলনার দৌলতপুরের অধিকাংশ পাটের গোডাউনে কাজ নেই শ্রমিকেদের। এ অঞ্চলের ২০টি রফতাকিারক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পুরোপুরি বেকার হয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। সম্প্রতি সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়কে আন্দোলনও করেন তারা।
 

দৌলতপুরের পাট গোডাউনে কাজ করা শ্রমিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি গত ১৫ বছর ধরে জুট রফতানির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এখন শুনতে পাচ্ছি, পাট রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে। গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে আমাদের কোন কাজ নেই। অনেক শ্রমিকই বেকার হয়ে পড়েছে।’
 

আরেক শ্রমিক রহিমা বেগম বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করি। রফতানি বন্ধ থাকায় আয় একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বাচ্চাদের খাবার জোটানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর খুলনা অফিসের পরিচালক জিনাত আরা আহমেদ অবশ্য দাবি করেন, অনুমতি সাপেক্ষে রফতানির সুযোগ এখনও রয়েছে। সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন