খুলনা অঞ্চলের পর্যটনে সীমাবদ্ধতা, সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিতে থমকে সম্ভাবনা

৫ দিন আগে
সম্ভাবনাময় খুলনা অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ মসজিদের পাশাপাশি এ অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এখানে গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সঠিক পরিকল্পনায় এ অঞ্চলের পর্যটনকেন্দ্রগুলো থেকে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে সুন্দরবন ঘিরে ট্যুর অপারেটরদের ব্যস্ততা বাড়ে। করমজল, হাড়বারিয়া, কটকা, কচিখালি, দুবলার চরসহ বনভূমির বিভিন্ন স্পটে নদীপথে পৌঁছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির, বানর ও পাখিসহ নানা বন্যপ্রাণী তাদের রোমাঞ্চিত করে। অনেক পর্যটক সুন্দরবনের পাশাপাশি বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদও ঘুরে দেখেন।

 

তবে শুধু এ দু’টি বিশ্ব ঐতিহ্য নয়, খুলনা অঞ্চলে রয়েছে ৬০০ বছরের পুরোনো খান জাহান আলীর দিঘি, অযোধ্যা মঠ, খুলনার রবীন্দ্র কমপ্লেক্স, স্যার পিসি রায়ের বাড়ি, দেড় হাজার বছরের পুরোনো যশোরের ভরত ভায়না কিংবা সাতক্ষীরার তেতুলিয়া মসজিদের মতো অসংখ্য পুরাকীর্তি। কিন্তু এসব স্থানে পর্যটন অবকাঠামো অনুন্নত থাকায় ভ্রমণপিপাসুরা সেভাবে আকৃষ্ট হচ্ছেন না।

 

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মেহেদী হাসান বলেন, ‘সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। তবে পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াত ব্যবস্থা আর আবাসনের মান উন্নত হলে অনেক বেশি পর্যটক এখানে আসতে উৎসাহিত হবেন।’

 

আরেক পর্যটক তাসনিম আক্তার বলেন, ‘ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে আমরা মুগ্ধ। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রচারণা নেই, অনেকেই জানেন না এখানে আরও কত ঐতিহাসিক স্থান আছে।’

 

আরও পড়ুন: বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত, তবু বিদেশিদের নেই আগ্রহ!

 

চট্টগ্রাম থেকে যশোরের ভরত ভায়নায় পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসা শিল্পী বেগম বলেন, ‘জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর, অনেকটা পাহারপুর বৌদ্ধ বিহারের আদলে। দেখে মন ভালো হবেই। তবে সড়ক ব্যবস্থা খুবই খারাপ, সরু সড়ক। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই, থাকার ব্যবস্থাও নেই। আবার আসতে গেলে দুইবার ভাবতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে, সেই সঙ্গে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে এখানে অনেক পর্যটক আসবেন।’

 

পর্যটন ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারণা বাড়ানো গেলে খুলনা অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। সুযোগ-সুবিধা উন্নত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক দ্বিগুণ হবে। আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সরকারের তিনটি দফতর—বন বিভাগ, পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডকে সমন্বয় করে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমি নিজে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের সমন্বয়হীনতা আর সরকারের আগ্রহের অভাবের কারণে এসব পর্যটনকেন্দ্র উন্নত হয়নি।’

 

অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারের জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সরকারের আরও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার বলে তারা মনে করেন।


প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলি ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রচারণা কম থাকার কারণে এসব নিদর্শনে পর্যটকরা কম যান। তবে আমরা প্রচারণা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ—পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো, প্রচারণা ও সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো গেলে খুলনা অঞ্চল অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন