রোববার (১১ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিনগর এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা আয়োজিত ‘বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনার পতন ও বেগম খালেদা জিয়ার বরণের ঘটনাকে তুলনা করে মামুন মাহমুদ বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট দেশের উচ্ছ্বসিত লাখো জনতা যেভাবে গণভবন দখল করে শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, ঠিক একইভাবে লাখো জনতা ঢল নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দিয়ে গ্রহণ করে নিয়েছে। অর্থাৎ গণজোয়ারের মাধ্যমে জনগণ একজনকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এবং আরেকজনকে সাদরে গ্রহণ করেছে। এই দুই গণজোয়ারে প্রমাণ হয়েছে দেশের উচ্ছ্বসিত জনগণ এতোদিন বেগম খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় ছিল’।
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যেদিন মুখ খুলবেন সেদিন দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। তাই দেশে আর কোন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, আপনারা কালক্ষেপন না করে দ্রুত নির্বাচন দিন। নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই ফ্যাসিবাদীদের ও গণহত্যার বিচার করা সম্ভব’।
এছাড়া শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বানানোর পেছনে মূখ্য ভূমিকায় থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে এমন দাবিও করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘দেশে জনগণের ভোটবিহীন যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ করিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বানানোর পেছনে তার অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আট মাস পর তিনি কিভাবে দেশে ছাড়লেন, কারা তাকে সেইফ এক্সিটে সহায়তা করেছে, এর দায়ভার কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে’।
অধ্যাপক মামুন মাহমুদ আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার বিদায় হলেও মানুষের ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা বিগত ১৫ বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। যে শহীদরা জুলাইয়ের আন্দোলনে হত্যার শিকার হয়েছেন তারা কেউ উপদেষ্টা, ক্ষমতা কিংবা নতুন দল গঠনের জন্যে আন্দোলনে নামেনি। তারা নেমেছিল স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে,অত্যাচারের বিরুদ্ধে’।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রিন্স
তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতা যাওয়ার জন্য কোনো উপদেষ্টা কিংবা কোনো শক্তির প্রয়োজন হবে না। আমাদের পাশে জনগণ আছে, জনগণের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবো। শহীদ পরিবারে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি আমাদের প্রাণের দাবি। এটা বিএনপির দাবি। স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ আর এদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ৫ আগস্টেই বলেছে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদ যেনো আবার গর্জে উঠতে না পারে তার জন্য আমরা আছি। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের পাশেও বিএনপি থাকবে’।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জনগণের মনের ভাষা জানেন না মন্তব্য করে মামুন মাহমুদ বলেন, ‘উপদেষ্টারা অনভিজ্ঞ তারা জনগণের মনের ভাষা জানেন না। একটা রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারে। তাই জনপ্রতিনিধিহীন বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দরকার’।
আলোচনা সভায় বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে শুরু করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশব্যাপী স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসন আমলের গণহত্যাসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাকের আহমেদ সোহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্বজনরাসহ জেলা বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।