হজরত খাদিজা রা.সম্মানিত ব্যবসায়িনী ও পূতপবিত্র নারী
হজরত খাদিজা রা. কুরাইশ বংশের একজন ধনী, সম্মানিত ও প্রভাবশালী নারী ছিলেন। তিনি الطاهرة (পবিত্রা) উপাধিতে পরিচিত ছিলেন। তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য সিরিয়া ও ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিশ্বস্ত কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করতেন, নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সততা, আমানতদারি এবং ব্যবসায়িক দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিশ্বস্ত সহযাত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। (আত তবকাতুল কুবরা:১/১৩১)
সিরিয়ার সফর এবং নবীজির সততার প্রমাণ
হজরত খাদিজা রা.-এর ব্যবসার পণ্য বহন করে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সিরিয়ার সফরে যান, তাঁর সাথে ছিলেন খাদিজার দাস মাইসারা। সফরের পুরো সময়জুড়ে নবীজির সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও উচ্চ চরিত্র দেখে মাইসারা বিস্মিত হন। ফিরে এসে তিনি খাদিজা রা.-কে নবীজির সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৌন্দর্যমণ্ডিত চরিত্র, সদাচরণ ও আল্লাহভীতি সম্পর্কে জানালেন। (সিরাতু ইবনি হিশাম:১/১৮৭)
আরও পড়ুন: কিয়ামতের আগে ফোরাত নদীতে যে আলামত প্রকাশ পাবে
বিয়ের প্রস্তাব এবং বরকতময় মিলন
মাইসারার বিবরণ শোনার পর হজরত খাদিজা রা.-এর হৃদয়ে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম নেয়। তিনি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচা আবু তালিব এই প্রস্তাব মেনে নেন এবং (২৫ বছর বয়সে) নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ বছর বয়সী খাদিজা রা. -এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। (ইবনু কাসির:২/২৯৫)
ঘরোয়া জীবনে নবীজির প্রশান্তি
খাদিজা রা.-এর ঘরে নবীজি শান্তি ও প্রশান্তির জীবনে প্রবেশ করেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এই দাম্পত্য সম্পর্ককে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও; আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। (সুরা রুম:২১)
খাদিজা রা.-এর ত্যাগ ও সমর্থন
নবুওয়াতের প্রারম্ভিক সময়ে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিরার গুহায় প্রথম ওহি গ্রহণ করেন, তখন তিনি ভীত হয়ে হজরত খাদিজা রা.-এর কাছে ফিরে আসেন। খাদিজা রা. তাঁকে সান্ত্বনা দেন এবং প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নবুওয়াতকে বিশ্বাস করেন। كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًاনা, আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না।(সহিহ বুখারি: ৩)
প্রথম মুসলিম নারী ও ইসলামের প্রথম আশ্রয়স্থল
হজরত খাদিজা রা.শুধু প্রথম মুসলিম নারীই ছিলেন না, বরং ইসলামের প্রথম আশ্রয়দাত্রী। তিনি তাঁর সম্পদ, সম্মান এবং জীবন সবকিছুই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন। নবীজি পরবর্তীতে তাঁর সম্পর্কে বলেন,
آمَنَتْ بِي حِينَ كَفَرَ بِيَ النَّاسُ وَصَدَّقَتْنِي حِينَ كَذَّبَنِي النَّاسُ যখন মানুষ আমাকে অস্বীকার করল, তখন খাদিজা আমাকে বিশ্বাস করলেন; যখন তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলল, তিনি তখন আমাকে সত্যবাদী বললেন। (মুসনাদু আহমাদ:২৪৮৬৪)
হজরত খাদিজা রা. -এর ঘরে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের যে নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন, তা পরবর্তীতে ইসলামের ভিত্তি রচনায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে। তাদের ঘর হয়ে ওঠে প্রথম দাওয়াতি কেন্দ্র, প্রথম সাহসের পাঠশালা এবং প্রথম ত্যাগের প্রেরণা।
]]>