এরআগে গত ১১ জুন তানিয়া নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১৮ লাখ ৯৫ হাজার প্লাটিলেটের একটি রিপোর্ট দেয়া হয়। সেটিও ধরা পড়ে চিকিৎসকের চোখে।
অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, একজন সুস্থ মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত হয় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার প্লাটিলেট প্রতি মাইক্রোলিটার (µL) রক্তে। সাধারণত এর বেশি হলে তাকে থ্রম্বোসাইটোসিস বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রোগ বা অসামঞ্জস্যতার কারণে, ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত প্লাটিলেট বৃদ্ধি পেতে পারে। অথচ বরগুনার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির রিপোর্টে দেখালো প্রায় ১৯ হাজার।
এ বিষয়ে মরিয়ম বলেন, ‘ডাক্তার অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখে আমাকে বলেন, রিপোর্ট ভুল হয়েছে। তাই নতুন করে আবার টেস্ট করার পরামর্শ দেন। নতুন টেস্টের সেই রিপোর্ট দেখে ডাক্তার আমাকে চিকিৎসা দেন।’
মরিয়মের মা আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এই ভুল রিপোর্টের কারণে আজ যদি আমার মেয়ের কিছু হতো তাহলে এর দায় কে নিত? এরকম ভুল রিপোর্ট দেয়া ক্লিনিক দ্রুত বন্ধ করে দেয়া দরকার।’
এ বিষয়ে অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সজীব বলেন, ‘অসাবধানতাবশত ভুলের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টাইপিং মিস্টেক এজন্য দায়ী। পরবর্তীতে সঠিক রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে পবিপ্রবির আনসার সদস্যের মৃত্যু
হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডেঙ্গু সংশ্লিষ্ট সব ধরনের টেস্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে তাদের। মানহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
মুছা নামের এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, ‘বরগুনার অধিকাংশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানহীন এবং অবৈধ। হাসপাতালে সব ধরনের টেস্ট চালু না থাকায় ক্লিনিকেই টেস্ট করাতে হচ্ছে। কিন্তু ক্লিনিকের টেস্টের ওপর নির্ভর করতে সাহস হচ্ছে না। কিন্তু আমরা নিরুপায়। ক্লিনিকগুলোর মান উন্নয়নের কাজ করা প্রয়োজন।’
জাকির নামে আরেক যুবক বলেন, ‘আমাদের শুধু টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু সঠিক রিপোর্ট পাচ্ছি না। বেশ ভোগান্তিতে পড়ছি আমরা। এরকম পরিস্থিতি চলতে পারে না। এজন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’
বরগুনা জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি (সনাক) মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সঠিক টেস্ট না এলে অধিকাংশ সময় মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে দেয়। এ কারণে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমাদের দাবি- দ্রুত নিবন্ধনহীন এবং মানহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করুক।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজোয়ানুর আলম বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর ভুল রিপোর্টের কারণে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। একজন রোগীকে ভুল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ট্রিটমেন্ট দিলে তার মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
সদর হাসপাতালে শিগগিরই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু করা হবে বলেও জানান রেজোয়ানুর আলম।
]]>