কোলোরেক্টাল ক্যানসার মানে হলো বৃহদন্ত্র ও রেকটামের ক্যানসার। অনেক সময় মলের ছোট পরিবর্তনগুলোই এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে আমাদের সংকেত জানায়। কিন্তু খেয়াল না করে এড়িয়ে গেলে ধীরে ধীরে তা বড় আকার ধারণ করতে পারে। সঠিক সময়ে লক্ষণগুলো গুরুত্ব দিয়ে রোগ ধরা পড়লে সহজেই তা নিরাময় করে জীবন বাঁচানো সম্ভব।
কেন প্রাথমিক শনাক্ত গুরুত্বপূর্ণ?
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির ভাষ্যানুযায়ী, যদি ক্যানসার প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে, তাহলে ৫ বছরের বাঁচার হার প্রায় ৯০%। কিন্তু যখন ক্যানসার আরও বিস্তার লাভ করলে এই হার ৭৩%। যদি এটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ব্যাপককভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এই হার মাত্র ১৩% এ নেমে আসে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখে এই রোগ শনাক্ত করা খুবই জরুরি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “টাইমস অফ ইন্ডিয়া”র একটি প্রতিবেদন থেকে চলুন জেনে নিই এই রোগের ৪টি প্রাথমিক লক্ষণ-
১. মল সরু বা রিবন আকারের হওয়া: মল যদি হঠাৎ অনেক সরু বা রিবন আকারে হয়ে গেছে, তাহলে তা হতে পারে একধরনের সতর্ক সংকেত। কোলোরেক্টাল ক্যানসার হওয়া মানে শরীরের অন্ত্রে একটি টিউমার থাকতে পারে, যেটি মল যাওয়ার রাস্তাকে সংকুচিত করে দেয়। এর ফলে মল সংকুচিত হয়ে সরু বা রিবন আকারে বের হতে পারে।
২. মলে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা মিউকাসের মতো পদার্থ যাওয়া: প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের অন্ত্র কিছু পরিমাণ শ্লেষ্মা তৈরি করে, যা মলকে মসৃণ করতে সাহায্য করে। তবে যদি মলে অস্বাভাবিকভাবে বেশি মিউকাস বা জেলির মতো কিছু দেখা যায়, তা কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এনসিবিআই এর মেডিকেল গাইডলাইন অনুযায়ী এটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
আরও পড়ুন: প্রি-ডায়াবেটিক রোগীর জরুরী ৫ পরামর্শ
৩. মলে রক্ত আসা: মলে রক্ত (লাল বা গাড় রঙের) কোলোরেক্টাল ক্যানসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক স্তরের রোগীদের ৫০-৬০% মলে রক্তের সমস্যায় ভোগেন।
তবে, মলে রক্ত আসা শুধু কোলোরেক্টাল ক্যানসারের কারণ নয়—হেমোরয়েডস, অ্যানাল ফিসার বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশনেও রক্ত দেখা দিতে পারে। কিন্তু যদি রক্ত নিয়মিত যায় এবং অন্য লক্ষণও থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
৪. দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: পেটের সমস্যা যেমন, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা এগুলোর মাঝে পরিবর্তন হওয়া কোলোরেক্টাল ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। মফিট ক্যানসার সেন্টারের মতে, ৫০ বছরের উপরে যারা এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
যদিও খাবারের পরিবর্তন, সংক্রমণ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এর মতো সাধারণ কারণ থাকতে পারে, তবে যদি এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে কোলোনস্কোপির মতো পরীক্ষা করানো উচিত।
আরও পড়ুন: ক্যানসার প্রতিরোধ করবে খালি পেটে ঘরোয়া এই ৪ পানীয়
তরুণদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে-
সম্প্রতি 'দ্য ল্যানসেট অনকোলজি' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের হার বেড়েছে। এমডিপিআই এর গবেষকদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, এবং স্থূলতা এই রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সচেতনতা, আগাম পরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসা—এ সবই কোলোরেক্টাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। তাই শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তনকেও অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৭






Bengali (BD) ·
English (US) ·