কোরবানির হাটে রাঙামাটির পাহাড়ি গরুর কদর দেশজুড়ে

৩ সপ্তাহ আগে
পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা রাঙামাটির ‘লাল চাটগাঁইয়া’ গরু এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে দেশজুড়ে। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে জেলার বিভিন্ন পশুর হাট। শহরের একমাত্র অস্থায়ী হাট পৌর ট্রাক টার্মিনাল এখন গরুতে ঠাসা। এমনকি জায়গা সংকটে অনেককে কাপ্তাই হ্রদে বোটে ঘুরে ঘুরেও গরু দেখতে দেখা গেছে।

প্রাকৃতিক খাদ্য ও অর্গানিক উপায়ে লালন-পালনের কারণে রাঙামাটির গরু আজ ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই জেলার পাহাড়ি এলাকায় খামারে মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না। গরুগুলো চরে বেড়ায় পাহাড়ে, খায় ঘাস, লতাপাতা আর কিছু কুড়া। ফলে গরুগুলোর শরীর হয় আকর্ষণীয়, আর মাংসে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা বেড়েই চলেছে।


জুরাছড়ি থেকে গরু নিয়ে আসা জয়সেন চাকমা বলেন, ‘এই গরুগুলো আমরা পাহাড়ে চড়িয়ে বড় করি। কোনো ইনজেকশন বা মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় না। তাই এদের মাংসও বেশি সুস্বাদু হয়।’


ব্যবসায়ী রমজান আলী জানান, ‘লংগদু থেকে ১৫টি গরু এনেছিলাম, তার মধ্যে ১৪টি এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। দামও ভালো পেয়েছি।’


চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যাপারী সালাম মিয়া বলেন, ‘এখানকার গরুতে চর্বি কম, তাই চট্টগ্রামে এসব গরুর চাহিদা অনেক। এবার ১৩টি গরু নিয়ে যাচ্ছি।’


ফেনী থেকে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাঙামাটির গরু প্রাকৃতিকভাবে লালনপালন করা হয় বলে ভালো লাগে। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি। আমরা মধ্যবিত্ত, তাই একটু কষ্ট হচ্ছে।’


স্থানীয় ক্রেতা দেলোয়ার হোসেনও একই সুরে বলেন, ‘দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। শুক্রবার আবার আসবো, তখন হয়তো কিছু ছাড় পাওয়া যাবে।’


আরও পড়ুন: সোহাগ মৃধার ‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া


পশুর হাটের ইজারাদার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের হাটে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক গরু জেলার বাইরে যাচ্ছে। এরইমধ্যে প্রায় ১ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া গরুটির দাম ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।’


রাঙামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. তুষার কান্তি চাকমা জানান, রাঙামাটির ‘লাল চাটগাঁইয়া’ গরু বা আরসিসি গরু দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি সুস্বাদু মাংসের জন্যও বিখ্যাত। এর চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে।


জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানিকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে মোট ১৯টি হাটে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। জেলার পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬০টি, এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৬২ হাজার ৮৮৩টি পশু।


পাহাড়ি প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা রাঙামাটির গরু এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পালন, অর্গানিক খাদ্য এবং চর্বিহীন সুস্বাদু মাংসের কারণে রাঙামাটির গরু কোরবানির হাটে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে বাজারে দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কিছুটা হতাশ। তবুও দেশজুড়ে চাহিদা ও প্রশংসা ধরে রেখেছে এই পাহাড়ি গরু।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন