তবে সমপরিমাণ খামারে এবছর এক হাজার ১৬৬টি পশু কম পালন করেছে খামারিরা। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিস্তিশীলতা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাড়তি পরিচর্যা খরচ। হাটে বাইরের ক্রেতা আসবেন কিনা? এসবসহ নানাবিধ কারণে ঈদে পশু বিক্রি ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশু বাজারে তোলার সময় ঘনিয়ে আসছে। গত করোনার পর থেকে তেমন লাভ করতে পারেননি। এবারও পরিমিত লাভের আশায় সারা বছর পশু পালন করেছেন। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতি। পশুখাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেশি। তাই খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাছাড়া মানুষের ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি আয়। সে জন্য পশু বিক্রি হবে কিনা, বিক্রি হলেও আশানুরূপ লাভ হবে কিনা, সরকার বাইরের দেশ থেকে গরু আমদানি করবে কিনা- এসব নিয়ে শঙ্কিত খামারিরা।
আরও পড়ুন: এবার কোরবানির হাটে আসবে ২২ মণের ‘রাজাবাবু’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে এ বছর ঈদ সামনে রেখে তিন হাজার ৫৯৭টি খামারে মোট ২২ হাজার ৪০০টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে ষাড় ১২ হাজার ৯১৭টি, গাভী এক হাজার ৩৬৭টি, ছাগল ৭ হাজার ৯৭৬টি, ভেড়া ১৪০টি। উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টি। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ২০৭টি।
তবে নানা কারণে এ বছর খামারে পশুর সংখ্যা কমেছে এক হাজার ১৬৬টি।উপজেলার যদুবয়রা, শিলাইদহ, সদকী ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, খামারিসহ অন্যরা ঈদুল আজহা সামনে রেখে সারা বছর গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লালনপালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় তাদের।
খোরশেদপুর গ্রামের জোয়ার্দার এগ্রো ফার্মের মালিক রানা জোয়ার্দার বলেন, গত বছর ঈদে ৪০টি পশু বিক্রি করে ভাল লাভ হয়েছিল। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এবছর ৪৩ টি ষাড় প্রস্তুত করেছি। আকারভেদে এক লাখ ১০ হাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা মূল্যের পশু আছে। আশা করছি এবারো ভাল দাম পাব। তাঁর ভাষ্য, এ বছর গোখাদ্যের দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল।
গত বছর ৯টি ষাড় গরু বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা করেছিলেন যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি হান্নান মোল্লা। তিনি বলেন, এবারও ৯টি ষাড় প্রস্তুত করেছি। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বাজারে ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না? ক্রেতা পেলেও ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারব কি না? এ সব নিয়ে চিন্তিত।প্রতি বছর ঈদের জন্য ৫০ - ৭০টি ষাড় প্রস্তুত করা হতো। তবে গেল দুই - তিন বছর পশু বিক্রি করে চরম লোকশান গুণেছি। সেজন্য খামারে আপাতত দুধ ও বাছুর উৎপাদন করা হচ্ছে। এ বছর প্রায় ৯০০ কেজি ওজনের মাত্র একটি বড় ষাড় আছে। চার বছর বয়সি এই ষাড়টিতে খরচ পড়েছে তিন লাখ টাকার মত। চার লাখ টাকা হলে ষাড়টি বিক্রি করবেন বলে জানালেন জগন্নাথপুরপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের রমন ঘোষ খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্ত। তিনি বলেন, এ বছর পশুর খরচ বেশি হলেও দাম কম।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামিরুল ইসলাম বলেন, তিনি সারা বছর গরু মোটাতাজা করেন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। তিনি বড় এবং দেখতে সুন্দর গরুগুলোই কেবল মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রির জন্য ভালো ভালো খাবার দিয়ে পালন করেন। এবার তাঁর তিনটি ষাঁড় আছে। বাড়িতে এসে ব্যাপারীরা সাড়ে চার লাখ টাকা দাম বলছেন। তবে পাঁচ লাখ হলে বিক্রি করব।
আরও পড়ুন: হজ ও ঈদুল আজহার কোরবানি কি একই?
সদকী ইউনিয়নের হুদা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক জামাল হোসেন বলেন, ‘৫৫ কেজি বস্তার ছালের দাম গতবার ছিল দুই হাজার ২০০ -৩০০ টাকা। আর এবার একই ছাল কিনতে ২০০ -৪০০ টাকা বেশি লাগছে। ৫০০ টাকার গুড়ার দাম এবার ৮০০ টাকা। গতবছরের ৪ -৫ টাকা আটির বিছালি এবার কিনেছি ৭ - ৮ টাকায়। তাঁর ভাষ্য, বড় বড় খামারি ও ব্যবসায়ীরা মালামাল মজুদ করে রাখে। সেজন্য বছর বছর দাম বাড়ে।’
কুমারখালী স্টেশন বাজার সংলগ্ন ছালপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, পশু মোটাতাজা করার জন্য এখন মানুষ সাধারণত ছাল (গমের ভুসি), ছোলা, খেসারি, খুদ (চালের ছোট অংশ), গুঁড়া, খৈল, ফিড, অ্যাংকার ডাল, খড় ইত্যাদি গোখাদ্য ব্যবহার করে। ৩৯ কেজির বস্তা খুদ এক হাজার ৫২০ টাকা, অ্যাংকারের ভুসি এক হাজার১৭০ ছোলার ভূসি ৫৫ কেজির বস্তা ছালের বস্তা দুই হাজার ৫৫০ টাকা। গত বছরের তুলনায় গোখাদ্যের দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ১৫০ - ২৫০ টাকা বেশি।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে এখানে পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এবার উপজেলায় ২২ হাজার ৪০০টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু আছে। রমজানের ঈদেও এবার পশু বিক্রি হওয়ায় গতবারের চেয়ে কিছু পশু কম আছে। এবারো ভাল দাম পাবেন খামারিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পশু বিক্রির জন্য কুমারখালীতে চারটি স্থায়ী সাপ্তাহিক হাট রয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে চলে বেচাকেনা। ন্যায্যমূল্যে পশু বেচাকেনার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটারিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।