কোরআন পাঠের উপকারিতা

৮ ঘন্টা আগে
কোরআন হচ্ছে আল্লাহর আলো কোরআন হচ্ছে নূর। কোরআন হচ্ছে মুজেজা। আর সেই নূর আমাদেরকে হ্নদয়কে শান্তি দেয়। কোরআন শরীফ পাঠ করলে মুমিনের হ্নদয় প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। কোরআন পাঠ করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। কোরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়।

আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক  দিয়েছি তা গোপনে ও .প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে তাদের এমন ব্যবসায়ের যার ক্ষয় নেই। এ জন্য যে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরও বেশী দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। (সুরা ফাতির: ২৯,৩০) 

 

যারা আল্লাহর কোরআন পাঠ করে তাদেরকে পরকালে প্রতিদান দেওয়া হবে। যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়নে রত থাকে, ঈমানের সাথে তা পাঠ করে, ভাল আমল ছেড়ে দেয়না, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, গোপনে ও প্রকাশ্যে দান খয়রাত করে, আল্লাহর বান্দাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে, তারা অবশ্য পরকালে প্রতিদান পাবে। মুমিন বান্দারা কর্মের প্রতিদানের জন্য যে আশা করবে, আল্লাহ তাদেরকে আরো বেশী প্রতিদান দিবেন যা তাদের কল্পনায়ও থাকবেনা। আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল ও দয়ময়। 

 

আরও পড়ুন: কোরবানি না দিয়ে সেই অর্থ দান করা নিয়ে ইসলাম কী বলে?

 

কোরআন পাঠ  করা ও আল্লাহর পথে ভাল ভাল কাজ করা এই গুলো হচ্ছে লাভজনক ব্যবসা, এই ব্যবসা দুনিয়ার ব্যবসা হতে বহুগুণে উত্তম। এই ব্যবসার কোন ক্ষতি নাই। শুধু লাভ আর লাভ। এই ব্যবসায় আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে। নবী সাহাবী ও মুমিন বান্দারা শুধু এই ব্যবসার সন্ধানে ছিলেন। তারা এই ব্যবসার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন। আল্লাহ বলেন, হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রদায়ক শাস্তি হতে? (সুরা আস সাফ: ১০)

 

কোরআন পাঠকারীর দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার মতো। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন কোরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার ন্যায়, যার ঘ্রাণও উত্তম স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কোরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজরের ন্যায়, যার কোন ঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ আছে। আর যে মুনাফিক কোরআন পাঠ করে তার দৃষ্টান্ত রায়হান ফুলের ন্যায় যার ঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কোরআন পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হানযালা মাকাল ফলের ন্যায়, যার সুঘ্রাণও নেই, স্বাদও তিক্ত। (বুখারি: ৫৪২৭)

 

কোরআন যারা পাঠ করে তারা আল্লাহর পরিবারের লোক। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহর পরিবার-পরিজন। সাহাবায়ে কেরাম জিঞ্জেস করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তিনি বললেন কোরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা। (ইবনে মাজাহ: ২১৫)

 

প্রতি হরফ ১০ নেকি লাভ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকি লাভ করবে। আর প্রতিটি নেকিকেই ১০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। আমি বলি না যে, আলিফ লাম মীম মিলে একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, এবং মীম আরেকটি হরফ। (তিরমিজি: ২৯১০)

 

সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা যারা কোরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়। আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (তিরমিজি: ২৯০৯)

 

যারা কোরআন পাঠ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন। আমির ইবনে ওয়াসিলা আবু তোফায়েল (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নাফে ইবন 'আবদুল হারিস (রা.)উসমান নামক স্থানে ওমর ইবনে খাত্তাব রা. এর সাথে মিলিত হন। ওমর (রা.) তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। 

 

তখন ওমর (রা.) বললেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে স্থলাভিষিক্ত (খলিফা বানিয়েছ) করেছ? তিনি বলেন, আমি তাদের উপর ইবনে আবযা রা. কে খলিফা বানিয়েছি। ওমর (রা.) বললেন ইবনে আবজা কে? তিনি বললেন, সে আমাদের একজন আযাদকৃত গোলাম। ওমর (রা.) বললেন, তুমি লোকদের উপর গোলামকে খলিফা বানিয়েছ? 

 

তিনি বললেন সে তো মহান আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াতকারী, ইলমে ফারায়েজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ 'আলেম এবং কাযী। ওমর (রা.) বললেন তুমি কি জান না যে, তোমাদের নবী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এ কিতাবের মাধ্যমে কতক গোত্রকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন আর কতককে এর দ্বারা অবনমিত করবেন? (ইবনে মাজাহ: ২১৮)

 

মৃত্যুর পরও কোরআন পাঠ কারীর লাশের মর্যাদা বহুগুণে বেশি।  জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) উহুদের শহীদগণের দুই’দুই’ জনকে একই কাপড়ে একত্র করতেন। এরপর জিজ্ঞাসা করতেন, তাদের উভয়ের মধ্যে কে কোরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইশারা করা হলে তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন, আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায় তাঁদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাঁদের গোসল দেওয়া হয়নি এবং তাঁদের (জানাজার) নামাজও আদায় করা হয়নি। (বুখারি, হাদিস নং ১৩৪৩)

 

কোরআন পাঠকারীর কিয়ামতের দিনে অনেক সম্মান। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন কিয়ামতের দিন কোরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি তা পাঠ করতে থাক এবং উপরে চড়তে (উঠতে) থাক। তুমি তাকে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাক, যেরূপ তুমি দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা তোমার সর্বশেষ বসবাসের স্থান (জান্নাত) ঐটিই, যেখানে তোমার কোরআনের আয়াত শেষ হবে। (আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৬৪)

 

আরও পড়ুন: আগে ঋণ পরিশোধ করবে নাকি কোরবানি করবে?

 

কোরআন পাঠকারীদের কে সুপারিশ করবে। জুবায়েদ (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন কোরআন এমন সুপারিশ কারী যার সুপারিশ (তেলাওয়াত কারীর পক্ষে) কবুল করা হবে। এমন বিতর্ক কারী যার বিতর্ক (তেলাওয়াত কারীর পক্ষে) গ্রহণ করা হবে। 

 

অতএব যে কোরআনকে সামনে রাখবে (তেলাওয়াত করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে) কোরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে পিছনে রাখবে (তেলাওয়াত করবেনা ও তদানুযায়ী আমল করবে না ) কোরআন তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ১২৪) আসুন আমরা বেশী বেশী করে কোরআন পাঠ করবো এবং কোরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হব, আমিন।

 

লেখক: আলেম, গবেষক

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন