কোরআন তিলাওয়াতের উত্তম সময়

১ দিন আগে
পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত, রহমত ও আলো। এই কুরআন তিলাওয়াত করা ইবাদত, সওয়াব ও নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপায়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন সময় কুরআন তিলাওয়াত করা সবচেয়ে উত্তম ও বরকতময়? কুরআন সুন্নাহ-র আলোকে দেখা যায়, আল্লাহ তাআলা তিলাওয়াতের নির্দিষ্ট কিছু সময়কে অধিক মর্যাদাপূর্ণ করেছেন, যাতে বান্দা তিলাওয়াতে মনোযোগী ও রুহানিয় আলোতে আলোকিত হয়।

 

ফজরের সময়, তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত

 

আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا আর ফজরের কুরআন (অর্থাৎ ফজরের তেলাওয়াত বা নামাজে পাঠিত কুরআন) নিশ্চয়ই ফজরের কুরআন পাঠে (ফেরেশতাদের সমাবেশ ঘটে। (সুরা বানি ইসরাইল:৭৮) 

 

তাফসিরে ইবনু কাসির ও তাফসিরুল কুরতুবিতে বর্ণিত; ফজরের তিলাওয়াতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত থাকেন এবং বান্দার কুরআন পাঠে সাক্ষ্য দেন। তাই সাহাবায়ে কেরাম রা. ও সালাফগণ ফজরের পর তিলাওয়াতকে সবচেয়ে বরকতময় সময় হিসেবে গ্রহণ করতেন।


রাতের শেষয়াংশ, আল্লাহর নিকটতম সময়

 

রাতের গভীর প্রহরে তিলাওয়াত করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও মর্যাদাসম্পন্ন।


আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا রাতে ওঠা (নফসকে) প্রবলভাবে দলিত করে এবং তা বাক্যের অধিকতর সঠিকভাবে উচ্চারিত হওয়ার মাধ্যম (সুরা মুজাম্মিল: ৬) 

 

আরও পড়ুন: ভ্রমণে নিরাপদ থাকার দোয়া

 

 

ইবনে আব্বাস রা.বলেন, রাতের নীরবতা ও প্রশান্তিতে তিলাওয়াত করলে হৃদয় বেশি নরম হয়, মনোযোগ থাকে বেশি। (তাফসিরুত তাবারি)

 

সকাল ও দিনের শুরুতে তিলাওয়াত

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালেই কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

 

بَارَكَ اللهُ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا আমার উম্মতের সকাল-সকালের সময়কে আল্লাহ বরকতময় করেছেন।
(সুনানুত তিরমিজি: ১২১২) তাই সকালবেলা কুরআন পাঠ করলে সারা দিনের আমল ও কাজেও বরকত আসে, অন্তর প্রশান্ত থাকে এবং মন জাগ্রত হয়।


মাগরিবের পর ও ইশার আগে সময়

সালাফে সালেহিন (প্রথম যুগের ধার্মিকগণ) মাগরিবের পর থেকে ইশার আগে সময়টিকে আল-ওয়াক্তুল মুবারক (বরকতময় সময়) হিসেবে গণ্য করতেন। এই সময় নামাজের পর বিশ্রামের ফাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করলে মনোযোগ থাকে বেশি এবং গুনাহমুক্ত পরিবেশে ইবাদতের স্বাদ পাওয়া যায়।


প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, أَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো যে আমল নিয়মিত হয়, যদিও তা সামান্য। (সহিহ বুখারি:৬৪৬৫) তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়,হোক তা সকাল, ফজরের পর, রাতে বা কাজের ফাঁকে,কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা সর্বোত্তম পন্থা।


জান্নাত অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়মিত তিলাওয়াত

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا কিয়ামতের দিনে কুরআনের সাথীকে বলা হবে,পড়ো, উন্নত হও এবং সুন্দর তিলাওয়াত কর যেমন দুনিয়ায় করেছিলে; তোমার মর্যাদা হবে তোমার শেষ তিলাওয়াতকৃত আয়াত পর্যন্ত।(সুনানু আবি দাউদ: ১৪৬৪) এই হাদিস প্রমাণ করে যে নিয়মিত তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা আল্লাহ তাআলার কাছে কত উচ্চ। কুরআন তিলাওয়াতের উত্তম সময় নির্ভর করে মনোযোগ, প্রশান্তি ও আত্মিক সংযোগের ওপর। তবুও কুরআন ও হাদিসের আলোকে ফজরের পর ও রাতের শেষ প্রহর সর্বোত্তম সময় হিসেবে বিবেচিত। اللهم اجعل القرآن ربيع قلوبنا ونور صدورنا وجلاء أحزاننا وذهاب همومنا  হে আল্লাহ! কুরআনকে আমাদের অন্তরের বসন্ত, বক্ষের আলো, দুঃখ-দুর্দশার নিরাময় বানিয়ে দাও। আমিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন