কোটি টাকার রেইন গজ মিটার উধাও, জড়িতদের শাস্তির দাবি কৃষকদের

১ সপ্তাহে আগে
কৃষকদের আগাম তিনদিনের আবহাওয়ার বার্তা দেয়ার জন্য মাদারীপুরের প্রতিটি ইউনিয়নে বসানো হয়েছিল এক একটি করে রেইন গজ মিটার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বসানো এই রেইন গজ মিটার অনেক জায়গা থেকে উধাও হয়ে গেছে। আবার কোথাও নষ্ট হয়ে গেছে সব যন্ত্রপাতি। তদারকির অভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প কৃষকদের কোন কাজেই আসেনি। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দোষিদের বিচার দাবি করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। আর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দায়সারা জবাব কৃষি বিভাগের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য আগাম তিনদিনের আবহাওয়ার বার্তা দিতে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ালে স্থাপন করা হয় একটি রেইন গজ মিটার। বছর না ঘুরতেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রটি। ফলে কোন সুফলই পাচ্ছেন না ইউনিয়নে কৃষকরা। 


এদিকে কেন্দুয়া ইউনিয়নে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া যন্ত্রটি বসানো হলেও শুধু আছে ডিসপ্লে। শুরুতে চালু থাকলেও অযত্ন আর অবহেলায় এখন পুরোপুরি নষ্ট। পরীক্ষানিরীক্ষার যন্ত্রও উধাও হয়ে গেছে অনেক আগে।


কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলার ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নে বসানো হয় আগাম পূর্বাভাসের যন্ত্রটি। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোকঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা কৃষকদের মাঝে প্রকাশের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। রেইন গজ মিটার অর্থাৎ আবহাওয়ার অগ্রিম পূর্বাভাস যন্ত্র। জেলার সবগুলো যন্ত্রই এখন বিকল। এই ঘটনার জন্য দায়ি ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন প্রান্তিক চাষিরা।


সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে বসানো রেইন গজ মিটার দেখাশোনা ও সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রত্যেক উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে দেয়া হয় একটি করে ট্যাব, প্রিন্টার, সীম কার্ড ও মডেম। যার অধিকাংশেরই নেই কোন হদিস।


আরও পড়ুন: অবহেলায় অকেজো রেইন গজ মিটার, সরকারের উদ্যোগ ব্যর্থ


সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ালে এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস যন্ত্রটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এটি যে দফতর থেকে স্থাপন করা হয়েছে, তারাই বলতে পারবে আসলে এটির কি উপকারিতা আছে।’


ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তালেব বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ছাদে আবহাওয়ার পূর্বাভাস যন্ত্রটির কিছু অংশ চুরি হয়ে গেছে। আর বাকি অংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। যারা এই যন্ত্র বসিয়ে লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’


তালতলা এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবহাওয়ার কোন অগ্রিম তথ্য পাই না। এই তথ্য পেলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। ফসল ফলাতে অনেকটাই কাজে আসতো।’


আব্দুর সোহবান মাতুব্বর নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস যন্ত্র আছে সেটি আমাদের জানা নেই। এই যন্ত্রের কাজ কি তাও জানি না। অগ্রিম আবহাওয়ার তথ্য পেলে চাষাবাদে অনেক উপকারে আসতো।’

 

আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষকের পাশে নেই কৃষি বিভাগ!


কেন্দুয়া ইউনিয়নের কৃষক জগদীশ দাস বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ। এখানে একটি আবহাওয়ার যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর উপকারিতা কি, আর এটি কি কাজে লাগে তা আজও জানতে পারিনি। অযত্ন অবহেলায় পুরো যন্ত্রটিই এখন অকেজো।’


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মাদারীপুরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ চন্দ্র জানান, এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে এর ব্যবহার হচ্ছে না। তাই অচল যন্ত্রগুলো সচল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন