৩৪ জুলাই (৩ আগস্ট ২০২৪)। কী কারফিউ, কী বন্দুকের গুলি! কিছুর পরোয়া না করা তরুণ প্রজন্ম সেদিন গোটা দেশকে সঙ্গে নিয়ে এসে দাঁড়ায় শ্রদ্ধার মিনারে। এ যেন ক্ষুব্ধ এক মহাসগর, যার উত্তাল ঢেউয়ে যেকোনো সময় চুরমার হবে ক্ষমতার দম্ভ আর অন্যায় অবিচারের ভারে নুয়ে পড়া পাহাড়।
রক্তের উপর দাঁড়িয়ে, নয় কোনো আপস। সেদিন এই এক স্লোগানে উত্তাল গোটা ভূখণ্ড। লাল সবুজ পতাকা হাতে, মাথায় কিংবা বুকে ধারণ করে জনতার স্রোত এসে মেশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেই কাতারে ছাত্রের কাঁধে হাত রেখে আসেন শিক্ষক, সন্তানের হাত ধরে আসেন বাবা-মা।
জনসমুদ্রে হাজির হন শিল্পী, শ্রমিকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। সবার কণ্ঠে একটাই দাবি, এত রক্তে রাঙানো হাতের নির্দেশনা মানবে না কেউ। সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এই বিশাল জমায়েত থেকে।
আরও পড়ুন: ‘৩৩ জুলাই’ / সেদিন সরকার পতনের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে
তবে এত খুনের পরও শাসকের তরফ থেকে আলোচনার আহ্বান আসে এদিন। সঙ্গে আসে প্রতিরোধের হুমকিও। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করতে চাইলে আমি রাজি। যে কোনো সময় তারা আসতে পারে। তারা ছাত্র কিংবা যাই হোক; তারা এই দেশের নাগরিক। যথাযথ তদন্ত করে তাদের বিচার হবে, আমি সেটাই চাই।’
একদিকে জনতার উত্তাল সমুদ্র অন্যদিকে হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ। একদিকে আলোচনার জন্য আহ্বান অন্যদিকে বন্দুকের তেজ। ঘটে প্রাণহানিও। সে সময়ের কথা তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী এক নেতা বলেন, ‘আপামর জনসাধারণসহ প্রায় প্রত্যেকেই একদফার জন্য প্রস্তুত ছিল। আমরা শহীদ মিনারে যাওয়ার আগে মানুষ আঙুল উঁচিয়ে এক দফার দাবি জানিয়েছিল। সে সময় স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা মানে ছিল নিজের ডেথ ওয়ারেন্টে সই করার মতো।’
২৪ এর ক্যালেন্ডারে চলমান সেই দীর্ঘ জুলাইয়ের এদিনে সারা বাংলা স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের ইতি টানতে ছিল বদ্ধপরিকর। কবে সমাপ্ত হবে রক্তিম জুলাই তার ক্ষণ গণনাও শুরু হয় গত বছরের এদিনেই।
]]>