তার অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল ট্রাম্পের। আর এ কারণেই প্রতিশ্রুতি দিয়েও এপস্টেইন ফাইল প্রকাশ করেননি তিনি।
কে এই জেফরি এপস্টেইন? কেন তার সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতার খবর হোয়াইট হাউসের জন্য অস্বস্তির? এই প্রশ্ন উস্কে দেয় খোদ মাস্কের এক্স হ্যান্ডলের পোস্ট। শুক্রবার (৬ জুন) করা পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘বড় বোমা ফেলার সময় চলে এসেছে। এপস্টেইনে ফাইলে রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামও। এই কারণেই এই ফাইল জনসমক্ষে আসেনি।’
মাস্কের এই পোস্ট কার্যত ভাইরাল হয়েছে। সেই সঙ্গেই সামনে চলে এসে দুই দশকেরও বেশি পুরনো সেই কেলেঙ্কারির ঘটনা। এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে করা একাধিক পোস্টও শেয়ার করেছেন ইলন মাস্ক।
এপস্টেইন কেলেঙ্কারি
আমেরিকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন জেফরি এপস্টেইন। কিন্তু ইতিহাসের অন্যতম বড় যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শিশুদের যৌন নির্যাতন, যৌন ব্যবসার জন্য নারী পাচার, নাবালিকা পাচার ও নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ভার্জিন আইল্যান্ডের কাছে ছোট্ট একটি দ্বীপের মালিকানা ছিল তার। যা ছিল এপস্টেইনের সাম্রাজ্যের ভরকেন্দ্র।
২০১৯ সালে গ্রেফতার করা হয় এপস্টেইনকে। কিন্তু ম্যানহাটন জেলের বন্দি থাকাকালীন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষ সেটাকে আত্মহত্যা বলে অভিহিত করেন। এপস্টেইনের মৃত্যুর পরও চর্চা বন্ধ হয়নি। নানা সময়ে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সমাজের নানাস্তরের প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ সামনে এসেছে।
সেই তালিকায় ধনকুবের ব্যবসায়ী, হলিউড তারকা, রাজনীতিবিদ-সহ অনেকেই রয়েছেন। ওই মামলা সম্পর্কিত নানা ফাইল, ফ্লাইটের তালিকা, কন্ট্যাক্ট লিস্ট বা যোগাযোগের তালিকা, মামলার নথি, সাক্ষীদের দেয়া বয়ান, নানা ফুটেজ- সবকিছু নিয়েই এক সঙ্গে এটিকে এপস্টেইন ফাইল বলা হয়।
২০১৯, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ধাপে ধাপে তার কিছু কিছু ফাইল সামনে আসে। কিন্তু অধিকাংশই এখনও সামনে আসেনি। সেই জায়গাটি নিয়েই তোপ দেগেছেন মাস্ক।
আরও পড়ুন: ইলন মাস্ক উন্মাদ হয়ে গেছেন: ট্রাম্প
ট্রাম্পের সঙ্গে এপস্টেইনের সংযোগ
এপস্টেইন ফাইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম সামনে এসেছে। ফ্লাইট রেকর্ড থেকে সামনে এসেছে যে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে ট্রাম্প একাধিক বার এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানে তার দ্বীপে গিয়েছেন। যদিও ট্রাম্প সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
অবশ্য এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা স্বীকার করেছেন ট্রাম্প। একই সামাজিক বৃত্তে তারা ছিলেন বলেও জানিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের দাবি, ২০০৪ সাল থেকেই এপস্টেইনের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।
এপস্টেইনের ‘ক্লায়েন্ট লিস্ট’ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়ক ও শিশু পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের ‘ক্লায়েন্ট লিস্ট’ প্রকাশ করবেন। লেক্স ফ্রিডম্যানকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে আমি কখনও তার (এপস্টেইনের) দ্বীপে যাইনি। তবে অনেক লোক গিয়েছে।’
এ সময় উপস্থাপক ফ্রিডম্যান মন্তব্য করেন, বিষয়টি খুবই অদ্ভুত যে, লিটল সেইন্ট লুইস দ্বীপে যারা যারা গেছেন তাদের তালিকাটা কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি। জবাবে তালিকা প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা খুবই কৌতূহল উদ্রেককারী, তাই না? যাইহোক, এটা (প্রকাশ করা) হবে।’
মাস্কের পোস্ট নিয়ে চর্চা কেন
ট্রাম্প এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে এলে আদতে মুখ পুড়বে আমেরিকার। কী কারণে ট্রাম্প এপস্টেইনের দ্বীপে এতবার গিয়েছিলেন? কেন ভিডিয়ো ফুটেজে এপস্টেইন ও ট্রাম্পকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে? এমন বহু অস্বস্তিকর প্রশ্ন রয়েছে।
সেই কারণেই কি এপস্টেইনের বহু নথি এখনও সামনে আসেনি? মাস্কের পোস্টে সেই প্রশ্নই তোলা হয়েছে। এপস্টেইনের প্রসঙ্গ তুলে করা মাস্কের পোস্টকে দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় বলে আখ্যা দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সরগরম। এপস্টেইনের সব নথি প্রকাশ্যে আনার জন্য সরব হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। সুর চড়াচ্ছেন ট্রাম্প বিরোধীরাও।
]]>