কুয়াকাটা সৈকতের সড়ক ধসের ঘটনায় তদন্ত শুরু

২ সপ্তাহ আগে
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জোয়ার-ভাটার ঢেউ লাগা এলাকায় নির্মাণাধীন আরসিসি রাস্তা ধসে পড়ার ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসিন সাদেকের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা ধসপ্রবণ স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং পৌরসভা মিলনায়তনে এক বৈঠকে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করেন।


তদন্ত কমিটির প্রধান কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসিন সাদেক জানান, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে।


এর আগে গত ২৯ মে গভীর রাতে সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক ঘেঁষা এলাকায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রাস্তাটির একটি বড় অংশ জলোচ্ছ্বাসে ধসে পড়ে। পরদিনই কলাপাড়া ইউএনও ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।


তদন্ত কমিটিতে এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।


বিতর্কিত ঠিকাদারি ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন

কুয়াকাটা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় ফেজ)’ এর আওতায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০০ মিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। সি কুইন হোটেল থেকে ‘ঝাউবাগান’ পর্যন্ত এ রাস্তার কাজ পায় তিনটি প্রতিষ্ঠান— মেসার্স আবরার এন্টারপ্রাইজ, এস এম ট্রেডার্স ও মোল্লা ট্রেডিং।


প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ। তবে কাজের অগ্রগতি কম থাকায় ৭২ দিন সময় বাড়ানো হয়। ধসের আগে কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৫০ ভাগ। এ পর্যন্ত ঠিকাদারদের এক কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: অতি ভারি বৃষ্টি ও ভূমিধস নিয়ে নতুন বার্তা


তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে এই তিন প্রতিষ্ঠান ‘ডামি’। মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল কুয়াকাটার অপসারিত মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠদের হাতে। যেমন, পৌর শ্রমিক লীগ নেতা ছগির মোল্লারের ‘মোল্লা ট্রেডিং’, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম মাল এর ‘এস এম ট্রেডার্স’ ও পৌর শ্রমিক লীগ নেতা বেলাল হোসেনের ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’। প্রতিষ্ঠান তিনটি মূলত তাদের নামেই চলেছে।


সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি, নির্মাণ ছিল নিম্নমানের

তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠিতে ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘রাস্তাটি দৃষ্টিকটুভাবে ভেঙে পড়েছে। নির্মাণ কাজ ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। লোকাল বালু ও পাতলা সিসি দিয়ে ঢালাই করার চেষ্টা হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কা সহ্য করার মতো কোনো স্থাপত্য পরিকল্পনা ছিল না। সম্ভাব্যতা যাচাই বা সংশ্লিষ্ট কারিগরি সংস্থার মতামত নেয়া হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।’


স্থানীয় বাসিন্দারাও সমুদ্রের জোয়ার ঘেঁষা অংশে রাস্তা নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন, প্রকল্প অনুমোদনের আগে আদৌ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা উপকূলীয় প্রকৌশল বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়েছিল কিনা।


এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসিন সাদেক বলেন, ‘রাস্তাটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিকাদারের মাধ্যমেই পুনর্নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সাগরের ঢেউ রোধে ব্লক, জিও ব্যাগ ও রিটেইনিং ওয়ালের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’


তবে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার তার দায় অস্বীকার করে বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কাজ দেয়া হয়েছে। সিসি ঢালাই চলছিল, এরপর আরসিসির কাজ হওয়ার কথা ছিল। ঢেউ ঠেকাতে গাইডওয়াল দেয়ার পরিকল্পনাও ছিল।’


কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারদের বকেয়া বিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন