জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ১৫০-২০০ টাকা দরে প্রায় দুই হাজার কেজি ক্যাপসিকাম প্রায় তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্যাপসিকাম চাষ থেকে চলতি মৌসুমে খরচ বাদে প্রায় ১৪ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ওই কৃষকরা। গাছে ভালো ফল ধরায় এবং লাভজনক চাষ হওয়ায় ক্যাপসিকামে স্বপ্ন বুনছেন অন্যান্য কৃষকরাও।
কৃষক লিখন আলীর ভাষ্য, জমির ইজারা, চারা, সার, পরিচর্যাসহ দশ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। গত সাতদিনে প্রায় দুই হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছেন। প্রতিকেজি ক্যাপসিকাম পাইকারি ১৫০-২০০ টাকা করে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। জমিতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম হচ্ছে তাতে উৎপাদন আগামী দুই মাসে আরও প্রায় ১৪ হাজার কেজির প্রত্যাশা করছেন। এতে অনায়াসেই ২১ থেকে ২২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
আরও পড়ুন: ক্যাপসিকামের রঙের ছটায় টাঙ্গাইলের চাষিদের মুখে হাসি
জানা গেছে, চাঁদপুর ইউনিয়নে জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতি নামে কৃষকদের একটি সংগঠন রয়েছে। সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু ২০২৪ সালে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। সেবছর এ চাষে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় চার লাখ টাকা মুনাফা পান। এতে ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহ বাড়ায় সমিতির অন্যান্য সদস্যরাও। তাদের মধ্যে ৩০ জন নানা বয়সী কৃষক যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকায় দশ বিঘা জমিতে নিরাপদ উচ্চফলনশীল সবজি ‘ইন্দ্রা গোল্ড' জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেন। ৬০ দিনের মাথায় গাছে ফল দেয়া শুরু হয়েছে।
শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক ঘেঁষে নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকা। সেখানে চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। সবুজ গাছে ঝুলছে ফল। ৪-৫ জন করে কৃষকরা দল বেঁধে কেউ গাছ থেকে ফল তুলছেন, কেউ পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার আধুনিক যন্ত্রে পরিমাপ করে প্যাকেট করছেন বাজারে নেয়ার জন্য।
আরও পড়ন: হাসি ফুটল সেই কৃষকের মুখে, ক্যাপসিকাম কিনে নিলো স্বপ্ন
এ সময় ষাটোর্ধ কৃষক মুন্সী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। গাছে প্রচুর ফল দেখে খুব ভালো লাগছে। বাজারে ভালো দাম থাকায় ব্যাপক লাভের আশা করছি। ধান, পাট, পেঁয়াজসহ অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি এ বছর ৩০ জন মিলে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি।
গেল সাতদিন ধরে ফল তুলে কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা ও ঢাকাতে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কৃষক গোলাম মোস্তফা। তার ভাষ্য, ভালো ফলন হওয়ায় প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা দেখতে আসছেন। তাদের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।
সমিতির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী দুই মাস ধরে ফল পাওয়া যাবে। এরপর এখানে ক্যাপসিকামের পরিবর্তে আধুনিক জাতের পেঁপের চারা রোপণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: ক্যাপসিকামের রঙের ছটায় টাঙ্গাইলের চাষিদের মুখে হাসি
ক্যাপসিকাম চাষ দেখতে এসেছেন নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রাজ্জাক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এলাকায় প্রথমবারের মতো এ চাষ হয়েছে। ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করব।’
বিদেশি সবজি চাষের খবর পেয়ে সেখানে এসেছেন কুষ্টিয়া ইবি থানার মৃত্তিকাপাড়া এলাকাল কৃষক আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘গাছে রোগবালাই নেই, মালচিং পদ্ধতিতে বিষমুক্ত চাষাবাদ হয়েছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। আগামীতে তিন বিঘা জমিতে এ চাষ করব।’
জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে গত বছর দুই বিঘা জমিতে প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ করেছিলাম। এতে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে প্রায় চার লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আমার দেখাদেখি সমিতির অন্যান্য সদস্যদের আগ্রহ বাড়ে এ চাষে। সেজন্য এ বছর ৩০ জন মিলে ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আগামী বছর ২৫ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের পরিকল্পকনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ক্যাপসিকাম খেলে কী হয়?
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একদল কৃষক উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ, উপকরণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকরা প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা খরচ করে ২৪ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রির স্বপ্ন বুনছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চমূল্যের সবজি ও ফসল চাষাবাদে যশোরে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পরামর্শ, উপকরণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’