কুয়েতে বাংলাদেশি আম-কাঁঠালের ঘ্রাণ

৪ সপ্তাহ আগে
আম-কাঁঠালের ঘ্রাণে হঠাৎই মনটা কেমন করে উঠল। যেন এক টুকরো বাংলাদেশ এসে দাঁড়িয়েছে কুয়েতের বুকে। সেন্ট্রাল ফ্রুট মার্কেট নামে এখানকার একটি ফলের বাজারে দেখা মিলল দেশের পরিচিত সেই ফলগুলো। প্রিয় আম আর কাঁঠাল।

শত ব্যস্ততা আর ক্লান্তির মাঝেও এই দৃশ্য প্রবাসীদের মন ছুঁয়ে যায়। কেউ ছবি তোলেন আবার কেউ গন্ধ শুকে দেশের গ্রামে ফেলে আসা স্মৃতি মনে করেন। এ শুধু ফল নয়, এ যেন দেশের স্বাদ, শিকড়ের টান আর হৃদয়ের একান্ত আবেগ।

 

কুয়েতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে এই মরুর দেশে এসেছেন। তারা এখানে থাকলেও তাদের মন পড়ে থাকে বাংলাদেশের মাটিতে। আর তাই বিদেশের বাজারে দেশের মৌসুমি ফলের উপস্থিতি তাদের জন্য শুধু খাবার নয়, মনে হয় যেন নিজের ঘরের কিছু।

 

তবে এই আনন্দ সবসময় ভাগ্যে জোটে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত ফল কুয়েতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছায় না। কুয়েতের সোলাইবিয়া অঞ্চলে অবস্থিত আল ফোর্দা ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে প্রধানত জর্ডান, সিরিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও মিশরের তাজা ফল সরাসরি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ফলমূলও আসে, তবে পরিমাণে খুব কম।  

 

আরও পড়ুন: বিশ্ব মানচিত্রে মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি, নেপথ্যে বাংলাদেশি নাসিম মিয়া

 

সময় সংবাদকে একজন বাংলাদেশি খুচরা বিক্রেতা জানালেন, বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা অনেক। কিন্তু আমরা ঠিকমতো পাই না। যতটুকু পাই তারও দাম বেশি। এরপরও ক্রেতারা নেয়, কারণ এটা নিজের দেশের জিনিস। 

 

বাংলাদেশে এত ফলমূল উৎপাদন হলেও তা কুয়েতে এত কম পরিমাণে আসে কেন। এখানকার পাইকারি আমদানিকারকরা বলছেন, মূল সমস্যা হলো অব্যবস্থাপনা। যথাযথ রফতানি পরিকল্পনার অভাব, সরাসরি ফ্লাইট সংকট এবং বিমানবন্দর ও কাস্টমসে দীর্ঘসূত্রিতা সব মিলিয়ে ফল ঠিক সময়মতো পৌঁছায় না। ফলে পচে যায়। 

 

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ফল উৎপাদনকারী দেশ হলেও রফতানিতে বেশ পিছিয়ে। কঠোর নজরদারিসহ সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে বাংলাদেশের পক্ষে এই বিপুল চাহিদাসম্পন্ন বাজার ধরা সম্ভব।

 

একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, এই বাজার ধরতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। না হলে বাংলাদেশি পণ্যের জায়গা নিয়ে নেবে অন্য দেশ।

 

আরও পড়ুন: প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় বাংলাদেশিসহ ১৩১ জনকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া

 

বিশ্লেষকদের মতে, ফলমূল রফতানিতে দেশের অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে নিয়মিত রফতানির সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়তে পারে, তেমনি তৈরি হতে পারে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। 

 

বাংলাদেশি আম-কাঁঠালের ঘ্রাণে যে আবেগ জড়িয়ে, তা কেবল নাকেই নয় থাকে মনে, স্মৃতিতে ও পরিচয়ের গর্বে। তাই এ পণ্যের গুরুত্ব শুধু রফতানি নয়, এটি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে বিদেশের মাটিতে। পরিমাণে কম হলেও যারা এসব ফল বিদেশের বাজারে পৌঁছে দেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রবাসীরা বলছেন, ‘আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। কিন্তু দেশের ফলমূলের স্বাদ ভোলা যায় না।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন