কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড: ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে বিপর্যয়, সর্বনিম্ন পাসের হার

১ সপ্তাহে আগে
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হারে রেকর্ড করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এ বছর বোর্ডটির পাসের হার নেমে এসেছে মাত্র ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যেখানে গত বছর (২০২৪) এই হার ছিল ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ। একই সঙ্গে কমে গেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। গত বছর ৭ হাজার ৯২২ জন পেলেও এবার পেয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭০৭ জন।

জানা গেছে, চলতি বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন পাস করেছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন ৫০ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী।


ফলাফল ঘোষণার পর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজি, উচ্চতর গণিত ও আইসিটিতে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। পাশাপাশি নকলমুক্ত ও কঠোরভাবে খাতা মূল্যায়নের কারণে সহজে পাস করার প্রবণতায় ভাটা পড়েছে।


কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রুনা নাছরীন বলেন, ‘এ বছর ইংরেজিতে পাসের হার মাত্র ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং উচ্চতর গণিতে ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এছাড়া ১৫২টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভেন্যু বাতিল করা হয়েছে এবং খাতা দেখা হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। ফলে প্রকৃত চিত্রই এবার ফুটে উঠেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার প্রশ্নপত্রের মান উন্নত ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন ছিল কঠোর, যা সামগ্রিক পাসের হার কমিয়ে দিয়েছে।’


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘ইংরেজি প্রশ্ন ছিল কঠিন। ভালো পরীক্ষা দিয়েও আশানুরূপ নম্বর পাইনি। আরেকটা বিষয়, যারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেছেন তারা যদি আরও সতর্কতার সঙ্গে খাতাগুলো মূল্যায়ন করতেন তাহলে আরও ভাল ফলাফল হতো।’


আরও পড়ুন: এইচএসসিতে বোর্ড সেরা বরিশাল জেলা


একই কলেজের সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘উচ্চতর গণিত ও আইসিটিতে নম্বর খুব কম এসেছে। তবে যারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছে, তারা পাস করেছে, এটা ভালো দিক। বিশেষ করে গেলো কয়েকমাস দেশের পরিস্থিতি ভাল যাচ্ছে না। চারদিকে আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ চলছে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী এসব আন্দোলন ও মিছিল সমাবেশে গিয়ে সময় নষ্ট করেছে। ভালভাবে পড়াশোনা করতে পারেনি। ফলে অনেকের ফলাফল খারাপ হয়েছে।’


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ‘এটিকে ফলাফলের বিপর্যয় না ভেবে বরং ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। এখন থেকে শিক্ষার্থীরা আরও মনোযোগী হবে। পড়াশোনা ছাড়া পাস করার মানসিকতা পরিবর্তন হবে।’


কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। নয়টি কলেজে কেউ পাস করেনি, তবে পাঁচটি কলেজ শতভাগ পাস করেছে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ফল সবচেয়ে খারাপ। আগামী দিনে ফলাফল উন্নয়নের লক্ষে প্রতিটি জেলায় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পর্যালোচনা করা হবে এবং দুর্বল বিষয়গুলো চিহ্নিত করে নির্দেশনা দেয়া হবে। গত কয়েক বছরে পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এবার সেই অভিযোগ নেই, এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।’


গত পাঁচ বছরের মধ্যে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের এ বছরের ফল সবচেয়ে খারাপ হলেও বোর্ড কর্মকর্তারা এটিকে বাস্তব ও নির্ভুল চিত্র হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, নকলমুক্ত, কঠোর মূল্যায়ন ও প্রশ্নের মান বাড়ানোর উদ্যোগই সাময়িকভাবে পাসের হার কমালেও দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকেই নিয়ে যাবে কুমিল্লা বোর্ডকে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন