ভাবতেই অবাক লাগছে তাইনা? নৌপথে সাবমেরিন, আকাশপথে শতশত মিসাইল, তবে অন্যমাত্রা যোগ করেছে স্নাইপারদের প্যারাসুটিং। এই সকল আয়োজনে শত্রু আতকে উঠে বলে উঠলো, অসম্ভব-অবিশ্বাস্য’ মুমিন বলে সুবহান কুদ্দুস। এ যেন বদবের স্মৃতি, সফেদ পোষাক পরিহিত এক বিশেষ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে আপন ঠিকানায় ফিরে গেলো। এ যেন আইয়ুবি বাহিনীর ক্রুসেডারদের উপর আকস্মিক হামলা।
কার এতো দুঃসাহস? চলুন দেখি কে সে। যার নখদর্পণে এই কৌশল সে সালাহুদ্দিন আইয়ুবীর (রহ.) প্রকৃত উত্তরসুরি। তারই আদর্শ-দর্শন লালন করে শিখেছেন কিভাবে বেইমানের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হয়। কে এই কৌশুলি?
আরও পড়ুন: নবীজিকে স্বপ্নে দেখার আমল
যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে কুটকৌশল রপ্ত করতো আইয়ুবির অনুপম নির্দেশন। কাহারো রক্তচক্ষু পরোয়া না করে, একমাত্র আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে জীবনে কত যে দু’সাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছেন! হাজারো মাযলুমানের আর্তনাদ-চিৎকারে আকাশ যখন ভারী হয়ে উঠেছিল তখন এ যেন যুগের সালাহুদ্দিন আইয়ুবি আইয়ুবি সানি ইয়াহয়া সিনওয়ার।
জীবনে যতগুলো অভিযান পরিচালনা করেছেন এই অভিশপ্ত জাতির বিরুদ্ধে, নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। ছিলেন ইহুদি জাতির ত্রাস, একটি দুঃস্বপ্ন, গন্তব্যহীন এক অজানা ভবিষ্যত, পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়া ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ।
উম্মাহর এই মরুশার্দুল তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তাদের সকল অহংকার। উন্মোচন করেছেন মুদ্রার অপর পাশ, সাধুসন্ন্যাসীর ভানধরা ইহুদি জাতির চিরচরিত ধৃষ্টতাসূলভ স্বভাব। পৃথিবীবাসীর সামনে তাদের ভুয়া অজেয় হবার খ্যাতি মিথ্যা প্রমাণিত করে গেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, মুমিন যতই হীনশক্তির অধিকারী হোক, সংখ্যা যতই কম হোক, আল্লাহর সাহায্য থাকলে পরাশক্তিকে পরাজিত করা কচুরি পানার মতোই সহজ। অবশেষে সম্মুখ যুদ্ধে অকাতরে বুক চিতিয়ে জীবন বিলিয়ে দিয়ে অন্তিম মুহূর্তকেও স্বরনিকা বানিয়ে গেছেন সাহসীকতার এই প্রবাদপুরুষ।
শুনেছি গাজার মায়েরা নাকি সন্তানদের থেকে এই বলে শপথ নেন আমার দুধের দাবি বীরবেশে সম্মুখ যুদ্ধে জীবন বিলিয়ে দেওয়া।” এ এক ভিন্ন ধরনের অরণ্য, যেখানে ভয়ের লেশমাত্রও নেই। কাপুরুষরা যেখানে পা ফেলতে দশবার নয়, বিশবার নয়, শতবার ভাবার পরও আতকে উঠে! যে ভূমির ছোট্ট ছোট্ট শিশুর রাঙাচোখের চাহনি নপুংশকদের কলিজা চৌচির করে দেয়।
জীবনের আদ্যপ্রান্ত বিবেচনায় নিলে তিনি চির অম্লান হয়ে থাকবেন এমন এক সাধকের সাথে—যিনি ঐতিহাসিক হিতিন যুদ্ধপূর্ব অবধি কুদস বিজয়ের সংগ্রামের অন্যতম পথিকৃত, স্বপ্নসারথি, দিগ্বিজয়ী সুলতান মাহমুদ জিনকি (রহ.)। যিনি আকসার জন্য পরম মমতায় নির্মাণ করেছিলেন নয়নাভিরাম মিম্বার, যাতে কুদস বিজয় পরবর্তি সময়ে বিজয়কেতন উড্ডয়নকারী সুলতান সালাহুদ্দিন (রহঃ) উপবিষ্ট হন, যা আজও আকসায় শোভা পাচ্ছে।
এই যুদ্ধে আশা জাগানিয়া হচ্ছে, তিনি ইহুদিদের যেভাবে গাজার মরু চকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন, বেঁচে ফেরার মত কোন পথ পাবে বলে মনে হয় না। তারা এসেছিল নিজ ইচ্ছায়, কিন্তু ফিরে যেতে হচ্ছে…
বিশিষ্ট দার্শনিক আল্লামা রুশদ বলেন,
শক্তিশালীর শরীরে দুর্বলের ক্ষুদ্র আঘাতগুলোই পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই চূড়ান্ত যুদ্ধে হামাস তাদের একে একে তিনজন আমির হারিয়েছে—তবুও তাদের মাঝে শত্রু সামান্যতমও আঁচ ধরাতে পারেনি। কথায় আছে, যে জাতির ইতিহাস যতটা সমৃদ্ধ, সে জাতির ভবিষ্যতও ততটাই সম্ভাবনাময়। মনে হচ্ছে, ইতিহাস যেন তার আপন মহিমায় ফিরে এসেছে।
বলবেন অতি আবেগী, উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্বপ্নবিলাস? বলি, এই তত্ত্বটা বুঝতে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আমাদের মনে থাকার কথা ঐতিহাসিক মূতার যুদ্ধে একে একে মুসলিম বাহিনীর তিনজনের জীবন বিলিয়ে যখন দায়িত্বে এলেন খালিদ—যুদ্ধচিত্র পাল্টে গেলো। যা ইতিহাসের পাঠকদের অজানা নয়।
আরও পড়ুন: আজান শুনে দোয়া পাঠের ফজিলত
আনা আবদি যন্নিবির বাস্তবতায় পূর্ণ আস্থা রেখে বলতে পারি, এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! ইতিহাস যেন তার আপন মহিমায় আবার ফিরে এসেছে। এখন পর্যন্ত আমরাও একে একে তিনজনকে হারালাম, প্রথমে ইসমাইল হানিয়া,দ্বিতীয় ইয়াহয়া সিনওয়ার, তৃতীয় মোহাম্মদ দেইফ (রহ.)। উম্মাহর গুরুদায়িত্ব এবারো যে খালিদের কাঁধে। এবার অপেক্ষার পালা। হে আল্লাহ! খালিদের হাতে মূতার যুদ্ধের ন্যায় বিজয়কে ত্বরান্বিত করুন।
]]>