সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের দ্বিতীয় পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ে শুনসান নীরবতা। কোথাও কেউ নেই! অথচ পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে মুখরিত থাকার কথা ছিল পাহাড়ের এই প্রান্তর। পর্যটনকে কেন্দ্রকে জীবিকা নির্বাহ করা এখানকার মানুষজনের জীবনও যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। রোজগার না থাকায় জীবনের ছন্দই যেন হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
তাদের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। হতাশার সুরে জানান দেন বিপাকের কথা।
পাহাড়িরা জানান, এই মৌসুমে কিছুটা আয়-রোজগার হয় তাদের। যা দিয়েই চলে বছরের বাকিটা সময়। কিন্তু এখনই নেই কোনো পর্যটক। এতে স্থানীয় ব্যবসায় পড়েছে ভাটা। লগ্নি খাটিয়ে তা হারানোর শঙ্কায় তারা।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে আওয়ামী লীগের ৪৮ নেতাকর্মীর জামিন
তারা বলেন, এই মৌসুমে পর্যটকদের কাছে হাতের তৈরি অনেক জিনিসপত্র বিক্রি হয়, যা দিয়েই চলে অনেক পরিবার। এখন সবাই হাহাকারে। পাহাড়ে কুকিচিনের উৎপাত বাড়ায় ভয়ে কেউ আসে না।
শুধু কেওক্রাডং পযর্টকশুন্য তা কিন্তু নয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলার দর্শনীয় স্থানের জন্য সুপরিচিত রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়িতে এখনো যাওয়ার অনুমতি মিলেনি পর্যটকদের। জারি রয়েছে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা।
এখানকার বাসিন্দারাও রয়েছেন একই সমস্যায়। পাহাড়িদের মালিকানাধীন কটেজগুলো পড়ে আছে খালি। বাজারগুলোতে নেই তেমন অর্থনৈতিক কার্যক্রম। স্থবির আনাগোনা।
তাদের তৈরি মাফলার, চাঁদর, কম্বল থেকে যাচ্ছে অবিক্রিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহিংসতার কারণে প্রশাসনের কঠোরতার কারণেই ভুক্তভোগী বলে জানান তারা।
কুকিচিন প্রধান ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকার মোস্ট ওয়ান্টেড নাথান বম বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতে অবস্থান নিলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাহাড়িদের।
মোবাইল ফোনে অভিনব কৌশলে চলছে এই চাঁদাবাজি। এই নির্যাতন থেকে বাদ যাচ্ছে না সাধারণ জুমচাষি থেকে শুরু করে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএ’র ৩ সদস্য নিহত
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, আমরা তাদের বয়কট করেছি। প্রতিহতের চেষ্টা করছি। তবে গহীন জঙ্গলে গিয়ে তারা তৎপরতা চালায়। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে এই অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে।
পুলিশ সুপার শহীদুল্লা কাওসার বলেন, তারা এখন দূর থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে। মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে। আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তারা যে সিমগুলো ব্যবহার করেন তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। তবে পাহাড়ে তাদের রুখতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের সাত উপজেলায় মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৮১ হাজার। এরমধ্যে সরাসরি এক লাখ মানুষ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত। আর বেশিরভাগ পাহাড়ি জুমচাষি হিসেবে পরিচিত।