কীটনাশকের বাজারে কারসাজি, দাম বাড়ে সবজির!

২ সপ্তাহ আগে
বাজারে শাক-সবজি কিনতে যখন ফাঁকা হচ্ছে ভোক্তার পকেট তখন এসব পণ্য উৎপাদনে দরকারি বালাইনাশক বিক্রি করে পকেট ভরছেন ডিলার ও আমদানিকারকরা। আমদানিমূল্যের চেয়ে তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি দামে কৃষকের কাছে বিক্রি হয় কীটনাশক। এমন তুঘলকি কাণ্ডের চিত্রই উঠে এসেছে সময় সংবাদের অনুসন্ধানে।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের উদাসীনতার কারণেই কৃষক ও ভোক্তাকে জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ব্যবসা করছেন বালাইনাশক আমদানিকারকরা।

 

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে বরাবরই নাজেহাল অবস্থা ভোক্তাদের। তবে বাজারের এমন দশায় দায় কার? মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া আর কী আছে, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে পণ্যমূল্য? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কৃষকের কাছে যায় সময় সংবাদ। ধামরাইয়ের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় শাক-সবজি চাষ করে টিকে থাকা দায়। তবে খরচ বাড়লেও সে অনুযায়ী মিলছে না আয়।

 

তবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে কীভাবে -- এ প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছেন মানিকগঞ্জের মাদরাসা শিক্ষক রিয়াদুল ইসলামও। ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে আবাদ করতে তিনি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কীটনাশক কেনেন বছরে। তার সন্দেহ, বালাইনাশক কেনাবেচা হচ্ছে অযৌক্তিক দামে।

 

তিনি বলেন, রোগমুক্ত ফসল আর ভালো ফলনের আশায় কীটনাশকের ওপর ভরসা করেন কৃষকরা। তবে বছর বছর সে কীটনাশকের উচ্চমূল্য প্রথমে চিন্তার ভাঁজ ফেলে কৃষকের কপালে। পরে যার চূড়ান্ত মাশুল গুনতে হয় ভোক্তাদের। কী দামে এসব কীটনাশক আমদানি করা হচ্ছে, আর কতটা যৌক্তিক দামে করা হচ্ছে বিক্রি -- তা খতিয়ে দেখা দরকার।

 

আরও পড়ুন: হাওড়পাড়ে বোরো চাষিদের হাহাকার!

 

এদিকে, ডিলারের কাছে পাওয়া একটি কোম্পানির ইনভয়েসে দেখা যায়, ৪শ গ্রাম ওজনের এক কার্টন বালাইনাশকের খুচরা মূল্য ২ হাজার ১৪০ টাকা, যা ডিলাররা কেনেন সর্বোচ্চ ৭২০ টাকায়। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য, এর আমদানি খরচ ৪১৮ টাকা। ৬৯৬ টাকায় আমদানি করা আরেকটি বালাইনাশকের খুচরা মূল্য ঠিক করা হয়েছে ৩ হাজার ২৪০ টাকা।

 

যদিও ডিলারদের দাবি, তারা কৃষকের কাছে বিক্রি করেন অনেক কম দামে। আর অন্য কোম্পানির ঘাড়ে দায় চাপিয়ে আমদানি খরচ আর খুচরা মূল্যের এমন আকাশ-পাতাল পার্থক্যের ব্যাখ্যা দেন এক আমদানিকারক। মিমপেক্স অ্যাগ্রোকেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সায়েদুজ্জামান বলেন, নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে এলে তারা অন্য কোম্পানির পণ্যের চেয়ে এক-দুই টাকা কম-বেশিতে বিক্রি করেন। এভাবেই চলে আসছে বাজার।

 

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষিখাতে সরকারের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কৃষক ও ভোক্তাকে রক্ষা করতে দরকার একটি বিশেষ কমিশন। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো. সদরুল আমিন বলেন, কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের জন্য জাতীয় কমিটি থাকা প্রয়োজন। সরকারকে কৃষিখাতে উন্নয়নে নজর দিতে হবে।

 

অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়া উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যৌক্তিকভাবে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও দাবি কৃষি অর্থনীতিবিদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন