কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানালেও আশ্বাস মিললেও হয়নি কোনো সমাধান। বরাদ্দ না থাকায় এই মুহূর্তে নতুন ভবন নির্মাণ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে শিক্ষা অধিদফতর।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও বেরিয়ে গেছে বড় বড় রড। আতঙ্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী। ঝুঁকিতেই চলছে কার্যক্রম। অথচ কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজটিতে ১৫টি বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। আর ৬৮ জন শিক্ষক ও ২২ জন কর্মচারী কর্মরত।
জানা যায়, ৫২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৮টি ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৯০ সালে। এরপর সংস্কারের অভাবে ভবনগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বাড়ে শিক্ষার্থীদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় মিছিল-মিটিং, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
একাডেমিক ভবনের তৃতীয়তলায় ছাত্রদের আসাবিক হোস্টেলে বড় বড় ফাটল থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় পলেস্তারা খসে আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পে বাড়ছে ভবনগুলো ধসের আশঙ্কাও। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজে এক সময়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও বার বার শুধু আশ্বাসের বানীতেই আটকে আছে নতুন ভবন নির্মাণ কার্যক্রম। বরাদ্দের অজুহাতে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
বাঙলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী বিতু দাস বলেন, ‘আমরা পাঠদানে যখন থাকি, তখনও আতঙ্কে থাকি। কখন যেন পলেস্তারা মাথার ওপর খসে পড়ে। এতে পড়ালেখারও বিঘœ ঘটছে। অনেকে ভয়ে শ্রেণিকক্ষেও আসে না।’
কলেজটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের আগে আবাসিক হোস্টেল ছিল। কিন্তু মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে আমরা সবাই বাহিরে থেকে লেখাপড়া করছি। এতে একদিকে বেড়েছে ব্যয়, অন্যদিকে বেড়েছে ভোগান্তি। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।’
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিরাজ বলেন, ‘একটি কলেজের সবগুলো ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। এই কলেজের দিকে কার কোনো নজরই নেই। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই যেন অসহায়। আমরা এর থেকে প্রতিকার চাই।’
আরও পড়ুন: দীর্ঘদিনেও হয়নি নতুন সেতু, ভাঙা ব্রিজে কাঠের পাটাতনই ভরসা!
মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান জানান, ‘কলেজটিতে মোট ৯টি ভবন রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি একাধিকবার লিখিত আকারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ও মন্ত্রনালয়ে জানানো হয়েছে, তারপরও দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাঠদান করছে। সবার একটাই দাবি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবন নির্মান করা হোক।’
মাদারীপুর শিক্ষা অধিদফতর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রজনী কুমার চাকমা জানান, প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ না থাকার কারনে এই মুহূর্তেই নতুনভবন নির্মাণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে, শিগগিরই নতুন ভবন নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।