বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭শে এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের খতিব রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে বর্বর নিপীড়ন চালানো হয় এবং তার মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে পুলিশের সোপর্দ করা হয় এবং আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে থাকাবস্থায় ভোর ৪ টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকাবস্থায় এমন মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যা একইসাথে মৌলিক মানবাধিকার হরণ, ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধা এবং মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘন। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ছেলেকে গলা কেটে হত্যার পর থানায় হাজির বাবা
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আরো উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, ইমাম রইস উদ্দিনের মৃত্যুর ছয়দিন পর তার স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত জড়িতদের কাউকেই আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে, একজন ব্যক্তি যত গুরুতর অপরাধেই অভিযুক্ত হোক না কেন, তার নিরাপত্তা ও জীবনের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্র এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এই ধরণের ঘটনায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং মব ভায়োলেন্সের প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে কোনো অভিযোগের ভিত্তিতেই মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে একজন নাগরিকের জান ও মালের ক্ষতিসাধন করা অথবা, প্রাণহানি ঘটানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
একইসঙ্গে, এই ঘটনায় বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবায় রাষ্ট্রের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। কারাগারগুলোকে মানবিক করে গড়ে তুলতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। এই ঘটনায় পুলিশের অপেশাদার আচরণের ফলে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারই যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এনসিপি। গণঅভ্যুত্থান উত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন ও বিচারের বাইরে গিয়ে মব ভায়োলেন্স এবং রাষ্ট্রের অবহেলায় কারা হেফাজতে এই মৃত্যুর ঘটনায় একটি পূর্নাঙ্গ, স্বচ্ছ, ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং জড়িতদের অতিশীঘ্রই আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানায় এনসিপি।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ফলস ছাদ ধসে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
এর আগে গাজীপুর মহানগরীর হায়দরাবাদ এলাকায় এক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগে মসজিদের ইমাম রইস উদ্দিনকে আটক করে গাছে বেধে গণধোলাই দেন এলাকাবাসী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠালে মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মৃত রইস উদ্দিন (৩৫) কুমিল্লার মতলব থানার বাদশা মিয়ার ছেলে। রহিজ হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে কাজ করতেন।
]]>