কাঠ পাচার ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকের নামে চাঁদাবাজি মামলা দিলো বন কর্মকর্তা!

৩ সপ্তাহ আগে
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কোটি টাকা সমমূল্যের সেগুন গাছ পাচারের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বন কর্মকর্তাদের হামলার শিকার হওয়া সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই এবার চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বন বিভাগের পক্ষে সাতছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন।


বিতর্কিত এ মামলার খবর প্রকাশিত হতেই স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও সচেতন সমাজে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর আগে, গাছ পাচারের ভিডিও ধারণ করার সময় হামলার শিকার সাংবাদিক দুজন বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এরপরই বন বিভাগ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করে।


গত শনিবার (৩০ আগস্ট) দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক ও ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাক্টিভিস্ট মুজাহিদ মসি এবং বাংলা টাইমসের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ত্রিপুরারী দেবনাথ গোপনে সাতছড়ি উদ্যানে গিয়ে সেগুন গাছ পাচারের আলামতের ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ ও জুনিয়র ওয়ার্ল্ডলাইফ স্কাউট নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।


ঘটনার পর ওই দুই সাংবাদিক থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে বন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বনের গাছ কাটার সত্যতা পান। তারা হামলার শিকার সাংবাদিকদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ধন্যবাদও জানান। একই সঙ্গে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার উদ্যোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।


আরও পড়ুন: ২৩ বছরে ৩০ আগুন, বার বার কেন পোড়ে সুন্দরবন?


কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ আড়াল করতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালামের নির্দেশে গত বুধবার সাংবাদিক মুজাহিদ মসির বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে মামুনুর রশিদ থানায় মামলা করেন বলে জানা গেছে।


সাংবাদিক মুজাহিদ মসি বলেন, ‘সেগুন গাছ পাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আমাকে বিভিন্নভাবে লোভ দেখানো হয়েছিল। আমি রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়েছে এবং এখন মিথ্যা মামলাও দিয়েছে। বনের লোকদের অপকর্মের আরও চাঞ্চল্যকর প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে। আমি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’


এদিকে বন কর্মকর্তারা দিচ্ছেন ভিন্ন বক্তব্য।


মামলার বাদী রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি আমার ডিএফওর নির্দেশনাক্রমেই মামলা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমাদের কিছু করার নিয়ম নেই। আমাদের সীমিত লোকবল দিয়ে বিশাল বন পাহারা দেয়া খুব কঠিন। তাই কিছু সেগুন গাছ চুরি বা পাচার হলেও হতে পারে।’


আরও পড়ুন: কাপ্তাইয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বাঁশ কোড়ল বিক্রির হিড়িক, হুমকিতে বন ও হাতি


সিলেটের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবুল কালাম বলেন, ‘রেঞ্জ কর্মকর্তা আমার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা দেয়নি। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ছিল। এর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’


চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আলম জানান, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। একজন এসআই মামলাটি তদন্ত করছেন।


উল্লেখ্য, রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ সাংবাদিকের ওপর হামলার মামলার প্রধান আসামি। সাতছড়ি উদ্যানে সেগুন পাচারের মূলহোতা হিসেবে বন বিভাগ তার বিরুদ্ধেই তদন্ত করছে। এছাড়া উদ্যানে বন্যপ্রাণী পাচার ও পেশাগত অসদাচরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে এরইমধ্যে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন