কাজাখস্তানে মাটির নিচে বিস্ময়কর মসজিদ

১ সপ্তাহে আগে
কাজাখস্তানের মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন হলো দেশটির ভূগর্ভস্থ মসজিদ। এগুলো শুধু ইবাদতের স্থানই নয়, বরং আধ্যাত্মিক সাধনার কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীন সুফি সাধকরা মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে নির্জনে ইবাদত ও সাধনার উদ্দেশ্যে পাহাড় খোদাই করে এসব মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। একই সঙ্গে কঠিন আবহাওয়া ও বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকেও নিজেদের সুরক্ষা পেতেন তাঁরা।

এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হলো শাকপাক আতা ভূগর্ভস্থ মসজিদ, যা পশ্চিম কাজাখস্তানের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর অন্যতম। ম্যাংগিস্তাউ অঞ্চলের তাউ-চিক গ্রাম থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে, উঙ্গাজি পর্বতমালার গিরিখাতের পাশে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই মসজিদ ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে অনন্য। কঠিন শিলা খোদাই করে নির্মিত হওয়ায় এটি এক বিস্ময়কর নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।

 

যদিও মসজিদটির সঙ্গে শাকপাক আতার নাম যুক্ত, তাঁর প্রকৃত পরিচয় আজও রহস্যময়। শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ এখানে আধ্যাত্মিক শান্তি ও সৌরভ লাভের আশায় আসছে। তবে শাকপাক আতার প্রকৃত নাম বা বিস্তারিত জীবনী আজও অজানা রয়ে গেছে।

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’

 

মসজিদের পাশে রয়েছে প্রাচীন ভূগর্ভস্থ কবরস্থান, যেখানে হাজার বছর ধরে মানুষকে দাফন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তুর্কমেন, আদিজসহ বিভিন্ন উপজাতির মানুষ এখানে সমাহিত। অতীতে এখানে একটি মাদরাসাও ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীরা দিনে পড়াশোনা করত এবং রাতে বিশ্রাম নিত। কমিউনিস্ট শাসনামলে সংঘাতে বহু শিক্ষার্থী শহীদ হন; তাঁদের দেহাবশেষের কিছু অংশ মসজিদের কাছে সমাহিত রয়েছে।

 

ইতিহাসবিদদের মতে, শাকপাক মসজিদের অবস্থান করা গুহাটি প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষের বসতির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসব গুহায় পানির ব্যবস্থা থাকায় সেগুলোকে আদর্শ আশ্রয়স্থল মনে করা হতো। পরবর্তীতে ইসলাম বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সুফিরা এসব গুহাকে আধ্যাত্মিক সাধনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তরুণ সুফিরা এখানে থেকে সাধনার পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতেন।

 

মসজিদের অভ্যন্তর সাজানো হয়েছে অলংকৃত স্তম্ভ ও প্রসারিত গম্বুজ দিয়ে, যেখানে জানালা দিয়ে আলো প্রবেশ করে। সর্পিল সিঁড়ি ধরে উপরে উঠলে দেখা যায় বহু কবর, যেগুলো তুর্কমেন ও কাজাক বংশোদ্ভূতদের। এ অঞ্চলে শাকপাক আতাকে ঘিরে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত। কেউ বলেন, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল শাহ মর্দান, সর্পরাজ বা পাতালপুরের রাজা। আবার কারো মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর তরবারি থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হতো, সেখান থেকেই ‘শাকপাক’ নামের উৎপত্তি। কারো মতে, তাঁর আস্তানার চারপাশে ঝলমলে পাথরের কারণেও এই নাম প্রচলিত হয়। তবে এসবই লোককথা; ঐতিহাসিকভাবে তাঁর সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

শাকপাক আতা ভূগর্ভস্থ মসজিদ শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং কাজাখস্তানের ইতিহাস, আধ্যাত্মিক সাধনা ও সংস্কৃতির এক বিরল প্রতীক। সূত্র: ইউরেশিয়া ডটট্রাভেল

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন