খুলনার স্টেশন রোড, বড় বাজার, দৌলতপুর ও নিরালা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের পণ্যই আসছে প্লাস্টিকের মোড়কে। বিক্রেতারা বলছেন, তারা জানেন আইন রয়েছে, তবে পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির প্যাকেজিংয়ের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
বড় বাজারের চাল বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোম্পানিগুলো আমাদের যেভাবে দেয়, আমরাও সেভাবেই বিক্রি করি।’
আরেক বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাটের বস্তায় পণ্য কেউ আনছেই না। আমরা শুধু বিক্রি করি। প্লাস্টিকের বস্তাই এখন সবখানে চলে।’
পাটের বস্তা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও অভিযোগ, নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা নেই। এক বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে হাজার হাজার বস্তা বিক্রি করতাম। এখন কেউ খোঁজই নেয় না। আইন আছে, কিন্তু সেটা শুধু কাগজে-কলমে। অভিযান না হলে কেউ মানবে না।’
আরেক বিক্রেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের অনেক মাল পড়ে আছে। চাহিদা না থাকায় ব্যবসা পড়ে গেছে।’
প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের সুদিন ফেরাতে সরকার ২০১০ সালে ছয়টি পণ্য ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিতে পাটের মোড়ক বাধ্যতামূলক করে। পরে আরও ১৩টি পণ্য এতে যুক্ত হয়। এতে চাহিদা বাড়ায় নতুন কারখানা গড়ে ওঠে, বিনিয়োগও বাড়ে।
কিন্তু আইন প্রয়োগ না থাকায় বিভিন্ন মিল মালিক আবারও ঝুঁকছেন প্লাস্টিকের মোড়কের দিকে। এতে পাটজাত পণ্যের উৎপাদকরা পড়েছেন চরম সংকটে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে জমছে প্লাস্টিক বর্জ্য, হুমকিতে মৎস্যসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য
হাবিব অ্যাগ্রো জুট মিলের মালিক হাবিবুল হাসানাত বলেন, ‘এক সময় ৫৫টি তাতে মাসে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি বস্তা বানাতাম। এখন মাত্র ২৫টি তাতে কাজ চলছে। মাসে এক লাখ বস্তাও বিক্রি হয় না, শুধুমাত্র প্লাস্টিকের কারণে।
যখনই আমার মার্কেটিং টিম বিভিন্ন রাইস মিলে যায়, তারা বলে লাগলে জানাবো, পরে জানায় না, মানে তারা প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করছে। এতে আর্থিকভাবে আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য শুধু দোকানে, বাজারে অভিযান পরিচালনা করলেই হবে না, অভিযান চালাতে হবে বড় বড় হাবগুলোতে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ এই সব এলাকার বড় বড় মিলগুলোতে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে।’
পাট আইন বাস্তবায়নে দুর্বল তদারকি ও প্রশাসনিক জটিলতাও বড় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। খুলনা পাট অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক এ এম আকতার হোসেন বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৬টি অভিযান চালিয়েছি। এ সময় ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি না থাকায় নিয়মিত অভিযান চালাতে পারছি না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, যাতে অভিযান আরও জোরদার করা যায়।’
আইন অনুযায়ী, পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এ আইন কার্যকর না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও দেশীয় পাটশিল্প।
]]>