বিসিবি নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে ওঠা নানা অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কথা বলেছেন কাউন্সিলরশিপ নিয়ে তামিমের অভিযোগ নিয়েও।
আগের দিন শঙ্কা প্রকাশ করে তামিম বলেছিলেন, ‘আমি চাপমুক্তভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। চাপ আমার ওপরে অনেক আছে। কাল আমার কাউন্সিলরশিপও বাতিল হয়ে যেতে পারে। আদালতে রিট হতে পারে, মামলাও হতে পারে। কেন হবে, সেটা আপনারা ভালো করে বুঝবেন।'
তার এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি একটি মিডিয়াতে দেখলাম যে তামিম ভাইয়ের কাউন্সিলরশিপ থাকবে কিনা এটা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কই আজকে তো মনে হয় কাউন্সিলরশিপ চলে আসছে। ওখানে কি কাউকে বাদ দেওয়া হয়েছে? একটি নির্বাচন হলে আসলে অনেক গুজব ছড়ায়, নিউজ হয়। কাউন্সিলর বাতিলের শঙ্কার নিউজে আমি তেমন কোনো পয়েন্ট দেখিনি। অনেকে কানে অনেক কিছু দেয় যে আপনাকে বোধহয় বাদ দিয়ে দেবে। আপনাকে কথা বলতে হবে কাগজে কি আসতেছে, সিদ্ধান্ত কি আসতেছে তার উপরে। গুজবের উপর যদি আপনি বলেন যে আমার চলে যাচ্ছে, এটা হচ্ছে ওটা হচ্ছে, তাহলে সেটা তো গ্রহণযোগ্য কিছু না।’
আরও পড়ুন: বিসিবি নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, কাউন্সিলরশিপ ফিরে পেল ১৫ ক্লাব
গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর মিরপুরে পাশাপাশি হাঁটতে দেখা গিয়েছিল তামিম ও আসিফকে। জাতীয় দলের তারকা এ ক্রিকেটার তার পছন্দেরই একজন। কিন্তু বছরখানেক পরে দুজনের সম্পর্কটা যেন একেবারে ভিন্ন অবস্থানে। দিন তিনেক আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানান, নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু বিষয়ে তামিমকে সামনে রেখে সুবিধা আদায় করতে চাইছে একটা পক্ষ। তামিমকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তামিমও আবার ২১ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকারের উধ্বর্তন মহল থেকেও নাকি বিসিবি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে কিনা, এমন প্রশ্নে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্পর্ক ব্যক্তিগত জায়গায় খারাপ না। বিষয়টা হচ্ছে, বিভিন্ন গুজবের কারণে বিভিন্ন অনুমান। আপনি একজন মানুষকে বিচার করবেন তার কাজ দিয়ে। কে কি বলল সেটা নিয়ে নয়। নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এখন দেখেন।’
গুঞ্জন আছে, বিএনপির সমর্থন পাচ্ছেন তামিম আর সরকারের সমর্থন পাচ্ছেন বুলবুল। আসিফ নিশ্চয়তা দিলেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। গত সরকারের মতো সরকার বা বাইরে থেকে নির্বাচনে কেউ প্রভাব খাটাতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা পক্ষপাতহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যে আপত্তিগুলো ছিল সেগুলো আজকে সমাধান হয়ে গেছে। কাউন্সিলররা ভোট দেবেন, যিনি নির্বাচিত হবেন তাকে মেনে নিতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগের নির্বাচনে কি হতো? একজন প্রেসিডেন্ট হবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে দিতেন, তাকে ঘিরেই সব আয়োজন হতো। এবার সেরকম না। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে এবং সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। দুই জনেরই পাল্লা যথেষ্ট ভারী। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যিনি আসবেন তাকে মেনে নিতে তো কোনো সমস্যা নেই। এই পরিবেশটা আমরা সামনেও চাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কোনো প্রধানমন্ত্রী, প্রধান উপদেষ্টা কিংবা ক্রীড়া উপদেষ্টা এসে ঠিক করে দেবে না, কে হবে তার জন্যই সব আয়োজন হবে। বাকিদের বলা হবে না যে তুমি নির্বাচনে দাঁড়াইও না। কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বলা হবে না যে আপনি আইসেন না।’
আরও পড়ুন: শঙ্কা কাটিয়ে বিসিবির ভোটার তালিকায় তামিম
এদিকে নির্বাচন ঘিরে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তারা হেরে যাওয়ার ভয় থেকেই এমন করছেন বলে জানান আসিফ। তিনি বলেন, ‘যে-ই হারার শঙ্কায় থাকে, হেরে যাবে মনে করে, আমি নির্দিষ্ট কাউকে বলছি না। তাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার একটা (ঝোঁক) থাকে। তবে আপনারা এবং আমরা দেখব সেটার যৌক্তিকতা আছে কিনা।’
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে সরব একাধিক ক্রিকেটার। তাদের বিষয়ে আসিফ বলেন, ‘ক্রিকেটারদের দিয়ে দলাদলি করানো দুঃখজনক, যারা করাচ্ছেন তাদের লজ্জা হওয়া উচিত, পৃথিবীর কোথাও দেখবেন না রানিং ক্রিকেটার বোর্ড নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে।’
আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বিসিবি নির্বাচন। সেদিনই ঘোষণা করা হবে ফলাফল।
]]>