কর বাড়লেও পৌরসভাটিতে বাড়েনি কোনো নাগরিক সেবা

৩ সপ্তাহ আগে
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাসিন্দারা। নিয়মিত পৌর কর বাড়লেও বাড়েনি নাগরিক সেবা। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা, সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নেই সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। সমস্যা সমাধানের দাবিতে বারবার কর্তৃপক্ষের দ্বারে ধর্না দিয়েও আশাহত পৌরবাসী। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থের অভাবে নিয়মিত উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় রায়পুর পৌরসভা। ২০০৪ সালে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। কিন্তু ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও নাগরিক সুবিধার দিক থেকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। পৌরবাসীর অভিযোগ, করের বোঝা বাড়লেও সেবা বাড়েনি, বরং নিত্য দুর্ভোগই তাদের সঙ্গী।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও ইট-সুরকি উঠে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও আবার যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নির্দিষ্ট ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। রয়েছে সুপেয় পানির সংকটও। ফলে নিয়মিত পৌর কর দেয়ার পরও প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী।

 

 

৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালমা চৌধুরী বলেন, ‘নামেই আমরা পৌরসভায় বাস করি। পুরো এলাকায় রাস্তা-ঘাটের এখন বেহাল অবস্থা। রাতের বেলায় চলাচলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’

 

৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল বাসার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়মিত পৌর কর দিলেও কোনো নাগরিক সুবিধা পাচ্ছি না। রাস্তার অবস্থা খারাপ, সুপেয় পানির সংকট তীব্র। মনে হয় আমরা পৌরসভায় নয়, গৌরসভায় বাস করছি।’

 

আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে চলাচল লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে!

 

পৌর শহরের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা-ঘাট বেহাল অবস্থায় আছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী।’

 

১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘রায়পুর পৌরসভা নামেই পৌরসভা। রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব আর পানির সংকট চরমে। সড়কে বাতির ব্যবস্থা নেই, ফলে সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় আমাদের। বহুদিন ধরে অবহেলিত ১নং ওয়ার্ডসহ পুরো পৌরসভাই যেন অবহেলায় পড়ে আছে।’

 

অটোরিকশা চালকরা জানান, সড়কের বড় বড় গর্তের কারণে রিকশা চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রায়ই রিকশার যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। যাত্রীরাও রাস্তাঘাটের কারণে উঠতে চান না, ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

 

 

এদিকে পৌর প্রশাসক মো. ইমরান খান বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দের অভাবে নিয়মিত উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়নি। তবে অনেকগুলো রাস্তা মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পৌরবাসী এর সুফল পাবেন। পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পেলে ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান করা হবে।’

 

৫০ হাজার জনসংখ্যার এ পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক এখন চলাচল অনুপযোগী। রয়েছে সুপেয় পানির সংকট। নেই কোনো চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। সচেতন মহলের মতে, নাগরিক সেবা নিশ্চিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন