কচুরিপানায় স্বপ্ন বুনছে সোনাপুরের ৩ শতাধিক পরিবার

২ সপ্তাহ আগে
এককালে যার ছিল না কোনো দাম, যার জায়গা ছিল কেবল জলাভূমির ওপর-সেই কচুরিপানাই এখন রফতানি হচ্ছে বিশ্বের ২৫টি দেশে। অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা এই জলজ উদ্ভিদ এখন হয়ে উঠেছে বহু মানুষের জীবিকার অন্যতম ভরসা।

পিরোজপুর জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা নাজিরপুর। উপজেলার গাঁওখালীর সোনাপুর গ্রামে পা রাখলেই চোখে পড়ে নদী আর বিলে ছড়িয়ে থাকা দিগন্তজোড়া কচুরিপানা। অথচ এই 'ফেলনা' উদ্ভিদটিই আজ এই গ্রামের শত শত মানুষকে এনে দিয়েছে স্বাবলম্বনের হাতছানি।

 

সোনাপুর গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, ‘এক সময় খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটতো। কিন্তু বর্তমানে কচুরিপানা শুকিয়ে বিক্রি করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা উপার্জন করে মোটামুটি ভালো আছি। আমাদের এ গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে শত শত মানুষ কচুরিপানা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।’

 

এ গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ পরিবারেরই কোনো না কোনোভাবে জড়িত এ পেশায়। সকাল হলে ছোট নৌকায় করে নদীতে যান নারী-পুরুষ, এমনকি স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও। খরচ বলতে তেমন কিছু নেই, শুধুই শ্রম। প্রায় আড়াই কেজি কচুরিপানা শুকিয়ে হয় এক কেজি শুকনো কাঁচামাল। আর প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা।

 

আরও পড়ুন: তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের প্রস্তাব

 

উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বললেন, মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ-এই ছয় মাস মৌসুম হলেও সংগ্রহ চলে বছরজুড়েই। কাটার পর শুকাতে লাগে পাঁচ-ছয় দিন, এরপর বাজারে বিক্রি। মাসে প্রায় ১০ টন কচুরিপানা কেনাবেচা হয়। কোনো পুঁজি ছাড়াই মানুষেরা রোজগার করছে। এখন এ গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কচুরিপানার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে।’

 

তবে শুধু বিক্রিই নয়, এই কচুরিপানা এখন রূপ নিচ্ছে বৈচিত্র্যময় রফতানি পণ্যে। তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুলঝুড়ি, বাহারি পাপোশ, পাটি, ফুলদানি, এমনকি জায়নামাজ, ব্যাগ, টুপিও। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

 

কচুরিপানা, যার দিকে আগে কেউ ফিরেও তাকাত না-এখন তা-ই বদলে দিচ্ছে গ্রামের দৃশ্যপট। শুধু জীবিকা নয়, এটি যেন হয়ে উঠেছে গ্রামের নারীদের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার এক শক্তিশালী উপায়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন