ঐক্যের পতনে অশ্রুভেজা বাইতুল মাকদিস

১ সপ্তাহে আগে
একদিন ছিল, যখন মুসলিম উম্মাহর হৃদয় ছিল এক, কণ্ঠস্বর ছিল এক, নেতৃত্ব ছিল এক। সেই দিনগুলোতে বাইতুল মাকদিস ছিল ইসলামী পতাকায় ঢাকা, সম্মানিত, স্বাধীন। তখন ইসরাইল নামক কোনো রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে ছিল না, ছিল না মুসলিম রক্তে ভেজা গাজা কিংবা জুলুমে বিধ্বস্ত পশ্চিম তীর।

কিন্তু ইতিহাস বদলে যায়। বাতিল চুপিসারে আগায়। আর সে সুযোগ সৃষ্টি হয় তখনই— যখন হকের ঐক্য ভেঙে পড়ে। মুসলিম উম্মাহর সেই ঐক্যের নাম ছিল উসমানি খেলাফত। উসমানী সাম্রাজ্য শুধু একটি রাষ্ট্র ছিল না, বরং এটি ছিল একটি বিশ্বজনীন মুসলিম নেতৃত্ব— যার চোখ কান ছিল পূর্ব থেকে পশ্চিম, যার শক্তি ছিল কালেমা ও কোরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত, যার সৈনিকরা জান্নাতের আশায় জীবন বিলিয়ে দিত, আর যার খলিফা ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, যদিও ইহুদি জায়নবাদীরা স্বর্ণের পাহাড় তুলে দিয়েছিল তার সামনে।

 

খেলাফতকে ধ্বংস করতে যুগ যুগ ধরে গোপনে গড়ে তোলা হয়েছিল ইহুদি-খ্রিস্টান জোট। “ব্রিটিশ রাজ” ছিল এর সামরিক বাহিনী, “জায়নিস্ট আন্দোলন” ছিল এর রাজনৈতিক হাতিয়ার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আরবদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিষ ঢেলে তাদেরকে উসমানী খেলাফতের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হলো। “স্বাধীনতা” নামের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আরবদের দিয়ে নিজেরা মুসলিমদের গলায় ছুরি চালালো।

 

খেলাফত ধ্বংস হলো ১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্কের হাতে, যার পিছনে ছিল পশ্চিমাদের সরাসরি সমর্থন। সেই দিন মুসলিম উম্মাহ তার দেহ থেকে মাথা হারালো। বাইতুল মাকদিসের দেয়ালে তখন থেকেই শোনা গেল আর্তনাদ— আমার রক্ষাকারী আর কেউ রইল না!

 

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনে বসবাস ছিল যে নবীদের

 

তার ঠিক ২৪ বছর পর, ১৯৪৮ সালে, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে জায়নিস্টরা প্রতিষ্ঠা করল ইসরাইল। দখল করল ফিলিস্তিনের ভূমি, গুঁড়িয়ে দিল ঘরবাড়ি, হত্যা করল হাজারো মুসলিম পুরুষ নারী শিশু। পবিত্র আল-আকসা মসজিদ অবমাননার শিকার হতে লাগল প্রতিদিন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পুরো জেরুজালেম ইসরাইলের দখলে চলে যায়। আর বাইতুল মাকদিস হয়ে ওঠে অবরুদ্ধ, অপমানিত, আর আশাহত।

 

একসময় যে ভূমি ছিল মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্র, আজ তা হয়ে গেছে দখলদারদের মঞ্চ। উম্মাহ আজ শতভাগ বিভক্ত— রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, মতবাদে মতবাদে, বাহ্যিক ইবাদতে ইবাদতে। কেউ গাজায় কাঁদছে, কেউ আরামে ঘুমোচ্ছে। কেউ আল-আকসার রক্ত দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়, কেউ প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। এটাই ঐক্যহীনতার মাশুল!

 

বাইতুল মাকদিসের চোখে আজ জল। সে খুঁজে ফেরে সেই সৈনিকদের, যারা সালাহউদ্দীনের মতো পবিত্রতা রক্ষায় বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে। সে আজও আশায় আছে— হয়তো কোনো একদিন উম্মাহ আবার এক হবে, খেলাফতের ছায়া ফিরে আসবে, এবং মুক্ত হবে তার বন্দিত্ব।

 

اللهم أعد لنا خلافتنا، ووحد أمتنا، وحرر أقصانا، واهزم أعداءك أعداء الدين হে আল্লাহ! আমাদের খেলাফত ফিরিয়ে দিন, উম্মাহকে ঐক্য দিন, বাইতুল মাকদিসকে মুক্ত করুন এবং আপনার শত্রুদের পরাজিত করুন।

 

আল জাজিরার এ মুহূর্তের তথ্য মতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৫০,৮১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৫,৬৮৮ জন আহত হয়েছে। সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের  মৃতের সংখ্যা আপডেট করে ৬১,৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনেরও বেশিকে বন্দী করা হয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন