এলডিসি উত্তরণে প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ, জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে ব্যবসায়ীরা

১ সপ্তাহে আগে
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। এবার জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য মসৃণ উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) বাস্তবায়নে সরকারের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন তারা। ৫ থেকে ৬ বছর সময় বাড়ানোর ব্যাখ্যা শুনে- প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টি আরও আগে কেন জানানো হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। যদিও সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে এলডিসি উত্তরণের বিকল্প দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা।

আর এক বছর পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে বাংলাদেশ। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আসছে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। বাধন ফ্যাশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির বলেন, দেশে সুদহার চড়া, জ্বালানি সংকট রয়েছে। সক্ষমতা সন্তোষজনক পর্যায়ে না তৈরি হলে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগীদের সঙ্গে ঠিকে থাকা সম্ভব হবে না।

 

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ক কমিটির (সিডিপি) পর্যালোচনায়, ২০১৮ ও ২০২১ সালে দুই দফায় এলডিসি উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

 

এ অবস্থার মধ্যেই এলডিসি উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির খবর জানতে গত ১০ নভেম্বর ঢাকায় আসে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। চারদিনের সফরের প্রথম দিনেই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। যেখানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়নে সরকারি সহযোগিতায় ঘাটতি রয়েছে। মার্কিন বাড়তি শুল্কের চাপের মধ্যে অন্য দেশ থেকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারালে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ।

 

আরও পড়ুন: আগামী বছর এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে দেশ পিছিয়ে পড়বে: বিজিএমইএ

 

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘সাবলীলভাবে এলডিসি উত্তরণের জন্য আরও ৫ থেকে ৬ বছর সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের কাছে। সুষ্ঠু ট্রানজিশনের জন্য যেভাবে বন্দর অবকাঠামো প্রস্তুত থাকা দরকার, বাস্তবে তা এখনও হয়নি। ইউরোপের সবচেয়ে বড় বাজার জিএসপি প্লাসে প্রবেশ করতে হলে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ আরও শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু এই খাতে আমাদের প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি লাইন নেই।’

 

ব্যবসায়ীদের এমন অবস্থানে প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়ে কেন আগেই জানায়নি বাংলাদেশ? সে বিষয়ে জাতিসংঘ প্রশ্ন তুলেছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা ব্যবসায়ী নেতা শামীম এহসান জানান, ‘তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর জন্য কেন আগেই আবেদন করা হয়নি, কেন আগেই বিষয়টি জানানো হলো না?’

 

তবে অর্থনীতিবিদরা আগামী বছরেই এলডিসি উত্তরণ চান। তাদের মতে, উত্তরণের ফলে উজ্জ্বল হবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, যা একদিকে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করবে, অন্যদিকে তৈরি পোশাকনির্ভর রফতানির পাশাপাশি বহুমুখী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে।

 

অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, ‘দেশের প্রায় সব সূচক এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তাই আগে আমাদের মর্যাদা বাড়ানো জরুরি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে অর্থনীতি বাধ্য হবে বহুমুখীকরণে, যা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

 

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর মতো নীতি সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন