রাত ৮টার দিকে এই বিশাল অঙ্কের তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান।
প্রতি তিন মাস পর পর দানসিন্দুক খোলা হলেও এবার ৪ মাস ১২ দিন পর খোলা হয় দানবাক্স। এবারও আগের মতোই ১৩টি লোহার সিন্দুক থেকে পাওয়া যায় ৩২ বস্তা টাকা, যার মধ্যে ছিল দেশি টাকার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও।
শনিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে টাকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এরপর সকাল ৯টায় শুরু হয় গণনা। মসজিদের নিচতলার লোহার সিন্দুকগুলোর তালা খুলে একে একে বস্তায় ভর্তি টাকা মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মাথায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেঝেতে টাকা ঢেলে শুরু হয় বান্ডেল তৈরির কাজ।
পাগলা মসজিদ নূরানী কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১০০ জন শিক্ষার্থী, শহরের আল জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার ২০০ জন শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজে মোট ৩৭০ জন মানুষের সমন্বয়ে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহার করে টাকা গণনা করা হয়।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, টাকা গণনাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সরব উপস্থিতিতে পরিচালিত হয় পুরো কার্যক্রম।
এর আগে, গত ১২ এপ্রিল দানসিন্দুক থেকে পাওয়া গিয়েছিল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। প্রতি বারের মতো এবারও দানের অর্থ মসজিদ ও মাদরাসার আনুষঙ্গিক খরচ বাদে জমা রাখা হচ্ছে মসজিদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদ ঘিরে তুরস্কের মসজিদগুলোর আদলে ইসলামিক কমপ্লেক্স হবে
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বহুতল পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জনশ্রুতি অনুসারে, কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী একটি চর এলাকায় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের আস্তানা ছিল। তার মৃত্যুর পর সেখানে নির্মিত হয় একটি মসজিদ, যা পরবর্তীতে পরিচিতি পায় 'পাগলা মসজিদ' নামে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, পাগলা মসজিদে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। দিন দিন বাড়ছে দানের পরিমাণ।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে প্রায় ৯১ কোটি টাকা বর্তমানে ব্যাংকে জমা আছে।