সাদা-কালো জাতের এই দুটি ষাঁড় আকারে যেমন বিশাল, তেমনি শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যেও নজরকাড়া। ‘টাইগার বিষুর’ ওজন প্রায় ৩০ মণ আর ‘নবাবের’ ওজন ৩৫ মণ। প্রতিদিন শত শত কৌতূহলী মানুষ ভিড় করছেন এসব খামারে। খামারে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার যাচ্ছেন শুধু এক নজর ষাঁড়টিকে দেখার আশায়।
খামারিরা বলছেন, তারা অনেক যত্ন করে দেশীয় খাবারে বড় করেছেন এই ষাঁড়গুলো। প্রতিদিন তাদের খাওয়ানো হয় দুধ, কলা, ছোলা, ভুসি ও উন্নত দানাদার খাবার।
জানা যায়, মান্দা উপজেলার ছোট বেলালদহ গ্রামের খামারি আবু ইউসুফ হেলাল খামারে লালনপালন করে বড় করে তুলেছেন ক্রস ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় ‘টাইগার বিষুকে’। খাওয়া-দাওয়া, চলন সব মিলিয়েই তার ষাঁড়ের ওজন ৩০ মণ। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি সুষম খাদ্য এবং পরিচর্যার মাধ্যমেই ‘টাইগার বিষুকে’ বড় করা হয়েছে বলে খামারির দাবি।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরের ‘কালা মানিক’ পালন খরচ ২০ লাখ টাকা
এ দিকে এনায়েতপুর মঞ্জিলতলা গ্রামের আফজাল হোসেনের খামারে বড় করে তুলেছেন ‘নবাবকে’। এর ওজন ৩৫ মণ। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সেই তার এমন ওজন হয়েছে।
খামারি আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, ‘৩৫ মণ ওজনের নবাবকে প্রতিদিন তিনবেলা গোসল করানো হয়। পরিচর্যায় নেয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। তার খাবারের তালিকায় প্রতিদিন থাকে ৫ কেজি ময়দা ও ভুসি, তিন কেজি দানাগুড়, পাশাপাশি গম, কালাই, বিভিন্ন দানাশস্য ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান।’
তিনি বলেন, ‘শুধু নবাব নয়, আমার খামারে রয়েছে আরও তিনটি বিশাল ষাঁড়। এদের নাম দেয়া হয়েছে ‘সাদা মানিক’, ‘কালো মানিক’ এবং ‘বাদশা’। প্রতিটি ষাঁড়ই আকৃতির দিক থেকে বিশাল এবং একইভাবে পরিচর্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে নবাবের দাম ৭ লাখ টাকা হাঁকানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশীয় পদ্ধতিতে বাঘা, কালা মানিকরা প্রস্তুত
‘টাইগার বিশুর’ মালিক খামারি আবু ইউসুফ হেলাল বলেন, ‘শখের বশে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি লালন পালন করেছি। শুরুতেই এ ষাঁড়টি নিয়ে আমার চরম কৌতূহল ছিল। মাত্র তিন বছরেই এর ওজন হয়েছে ৩০ মণ। এখন পর্যন্ত দাম বলা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ কেজি সুষম খাবার খাওয়াতে হয়েছে। এই বিশাল ষাঁড়ের খ্যাতি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়।’
তিনি জানান, ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খামার দুটিতে ভিড় করছেন। অনেকেই ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) শেয়ার করছেন। এতে ষাঁড়গুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সব মিলিয়ে খামার দুটিতে এখন এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: ৩৩ মণের কালা মানিকের সঙ্গে ২০ কেজির কাঞ্চন ফ্রি
সরেজমিনে দেখা যায়, যারা গরু কিনবেন তারা যেমন খামারে ভিড় করছেন। তেমনি ভিড় করছেন কৌতূহলী মানুষ। গরুগুলো দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ধরনের বড় ষাঁড় কোরবানির ঈদের বাজারে ভালো দামে বিক্রির সম্ভাবনা থাকে। শুধু লাভ নয়, পশুদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নই তাদের এই খাতে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। এগুলো গরু তো নয়, যেন এক একটি হাতি।
মান্দা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান শিপন বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামার দুটিতে ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সার্বক্ষণিক তদারকি ছিল। প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে এদের লালন-পালন করা হয়েছে। খামার দুটি এখন শুধুই একটি পশু খামার নয় বরং এটি হয়ে উঠেছে পশুপ্রেম, পরিশ্রম ও সফলতার এক অনন্য উদাহরণ।’