এপ্রিলজুড়ে স্বর্ণের উত্থান-পতনে টালমাটাল বাজার, নেপথ্যে কী?

১ সপ্তাহে আগে
চলতি বছরের শুরু থেকেই উত্থান-পতনে টালমাটাল দেশের স্বর্ণের বাজার। এপ্রিলে যা হয়ে ওঠে আরও অস্থির। এ মাসে মোট ৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস), যার মধ্যে দাম বেড়েছে ৬ বার।

প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচুর্যের অপর নাম স্বর্ণ। একে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য।

 

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালজুড়ে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৪ মাসে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ২৬ বার ওঠানামা করেছে।

 

আরও পড়ুন: স্বর্ণে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ?

 

স্বর্ণের বাজারে চলছে উত্থান-পতনের নাটক। দাম হঠাৎ বাড়ছে, আবার হঠাৎই কমছে। সবশেষ দাম সমন্বয়ে ভরিতে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা কমে বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকায়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকায়।

 

এপ্রিলে শুরুটা হয় পতনের মধ্য দিয়েই। গত ৮ এপ্রিল ভরিতে ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা। তবে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভরিতে বাড়ানো হয় ২ হাজার ৪০৩ টাকা। দাম গিয়ে ঠেকে রেকর্ড ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকায়।

 

এর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে স্বর্ণের দামে বড় লাফ দেখে দেশবাসী। ভরিতে ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরির দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৬৩ হাজার ২১৪ টাকা। তবে পরের দিনই ভরিতে ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা।

 

এরপর টানা ৪ দফায় মোট ১৫ হাজার ৭১২ টাকা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। গত ১৬, ১৯, ২১ ও ২২ এপ্রিল টানা ৪ দফায় দেশের বাজারে বাড়ে স্বর্ণের দাম। প্রতিবারেই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ে স্বর্ণের দাম।

 

তবে সবশেষ গত ২৩ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে স্বর্ণের দামে বড় পতন ঘটে। সেদিন ভরিতে কমানো হয় ৫ হাজার ৩৪২ টাকা।

 

মূলত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ডলারের দামের ওঠানামার বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করেছে। পাশাপাশি এই মূল্যবান ধাতুর বাজারে প্রভাব ফেলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল দ্বন্দ্ব।

 

ট্রাম্পের নানা সিদ্ধান্ত ও বিশ্বজুড়ে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্সে স্বর্ণের দাম ছুঁয়েছে রেকর্ড ৩ হাজার ৫০০ ডলারের মাইলফলক। তবে সেটি কমে এখন বেচাকেনা হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ ডলারের আশেপাশে।

 

আরও পড়ুন: কোনদিকে যাচ্ছে স্বর্ণের বাজার?

 

সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই স্বর্ণের দাম ছাড়িয়ে যেতে পারে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার।

 

জেপি মরগানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চলতি বছর প্রতি প্রান্তিকে গড় স্বর্ণ চাহিদা থাকতে পারে প্রায় ৭১০ টন, যা দামের উর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখতে সহায়ক। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের গড় দাম হতে পারে ৩ হাজার ৬৭৫ ডলার। তবে বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে আরও আগেই।

 

আর বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামা করায় এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। বাজুস বলছে, বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামা করলে এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ে। এজন্য দাম সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন