শুক্রবার (৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ শঙ্কার কথা জানায় দলটি।
বিবৃতিতে গণসংহতি বলে, “অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে আজকের ভাষণ আমরা মনোযোগের সাথে শুনেছি। গণঅভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার জন্য আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা দরকার। এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার কথা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বারবার বলা হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আজকের ভাষণে এর প্রতিফলন ছিল সেটা ইতিবাচক। তবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। আমরা এটাও বলেছিলাম, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে না পারলে তার কারণ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট হওয়া দরকার। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় হিসেবে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, যে সময়টি, প্রতিকূল আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা, এবং এর আগে রোজার কারণে, সবমিলিয়ে নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল ও বাস্তবসম্মত হবে- সে ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সাথে আরও আলোচনা ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পাশাপাশি, সংবিধান সংস্কারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ও এই সংস্কারকে সুরক্ষিত করার জন্য আমরা আগামী নির্বাচনকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’-এর নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার আহবান জানিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বন্দর বিদেশিদেরকে দেওয়ার ব্যাপারে নানা মহলের প্রশ্ন ও সমালোচনা আছে। কিন্তু সেটাকে অপপ্রচার বলে 'প্রতিহত' করার জন্য যে আহবান প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সেটা তার কাছ থেকে কাম্য নয়। সরকারের বরং এই ইস্যু নিয়ে সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা দরকার।”
আরও পড়ুন: নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করায় জামায়াতের সন্তোষ প্রকাশ
এর আগে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তা-ই করছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সব কটিরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্যদিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এ ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে ছাত্র-জনতার সব আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।
তিনি বলেন, ‘সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’