এপস্টেইন সম্পর্কিত নথির একাংশ প্রকাশ করল মার্কিন কংগ্রেস

৪ সপ্তাহ আগে
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কিত নথি তথা এপস্টেইন ফাইলের একাংশ অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। নথি প্রকাশে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর অব্যাহত চাপের মধ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পর্কিত নথির একাংশ প্রকাশ করে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটি।

হাউস ওভারসাইট কমিটির দাবি, যাতে আমেরিকার সকলে সরাসরি এই নথিগুলো দেখতে পারেন, তাই স্বচ্ছতার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোট ৩৩ হাজার ২৯৫ পৃষ্ঠার ডিজিটাল নথিতে এপস্টেইনের যাবতীয় বিমান ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য, কারাগারের ভেতরের সিসিটিভি ভিডিও, আদালতের কাগজপত্র, অডিও রেকর্ডিং, ইমেইল ইত্যাদি রয়েছে।

 

যদিও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়েরই দাবি, প্রকাশিত নথিতে নতুন তথ্য বিশেষ নেই। এনবিসি নিউজ বলেছে, এসব নথির বিষয়বস্তু কি তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে যেসব নথি প্রকাশ করা হয়েছে, তার অনেকগুলোই আগেই অনলাইনে ফাঁস হয়েছে।

 

মার্কিন বিচার বিভাগ এপস্টেইন সম্পর্কিত অন্যান্য নথি গোপন রেখেছে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। জুলাই মাসে বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, এপস্টেইনের ‘গ্রাহক’দের নামের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি, যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ একাধিক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যৌন নিপীড়নকারী এপস্টেইনের যোগাযোগ ছিল। ফলে মঙ্গলবার অনলাইনে প্রকাশিত নথিতেও আলাদা করে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

 

আরও পড়ুন: কেন এপস্টেইন ফাইল প্রকাশ করেননি ট্রাম্প, ফাঁস করলেন মাস্ক

 

গত মাসে এপস্টেইন সম্পর্কিত নথিগুলো অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাউস ওভারসাইট কমিটির চেয়ারম্যান জেমস কমার। তার কথায়, ‘আমি যত দূর জানি, নথিগুলোতে নতুন কিছু নেই। তবে স্বচ্ছতার জন্য এই নথিগুলো আপলোড করা হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সকলে এই এগুলো দেখতে পারে।’

 

প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে এপস্টেইনের আত্মহত্যার রাতে নিউইয়র্কের কারাগারে তার সেলের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। ২০১৯ সালের ৯ অগস্ট সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত মোট ১৩ ঘণ্টা ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই এপস্টেইন মারা গিয়েছিলেন।

 

দীর্ঘ দিন ধরে চলা এপস্টেইন মামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ট্রাম্প ছাড়াও এপস্টেইনের ফাইলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন থেকে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রু, মার্কিন ব্যবসায়ী বিল গেটস, খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন থেকে গুগলের ল্যারি পেজসহ অনেকের নাম রয়েছে। তবে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসেনি। 

 

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এপস্টেইন তরুণীদের যৌন নির্যাতন করতেন, সেই সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। এমনকি ট্রাম্প এবং এপস্টেইন সম্পর্ক অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউসও। ইতিমধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছেন ট্রাম্প। দাবি করেছেন এক হাজার কোটি ডলার। 

 

আরও পড়ুন: জেফরি এপস্টেইন: যৌন কেলেঙ্কারির নথিতে এবার স্টিফেন হকিংয়ের নাম

 

এপস্টেইন ফাইল

 

আমেরিকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন জেফরি এপস্টেইন। কিন্তু ব্যবসার আড়ালে ইতিহাসের অন্যতম বড় যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শিশুদের যৌন নির্যাতন, যৌন ব্যবসার জন্য নারী পাচার, নাবালিকা পাচার ও নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ভার্জিন আইল্যান্ডের কাছে ছোট্ট একটি দ্বীপের মালিকানা ছিল তার। যা ছিল এপস্টেইনের সাম্রাজ্যের ভরকেন্দ্র।

 

২০১৯ সালে গ্রেফতার করা হয় এপস্টেইনকে। কিন্তু ম্যানহাটন জেলের বন্দি থাকাকালীন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষ সেটাকে আত্মহত্যা বলে অভিহিত করেন। এপস্টেইনের মৃত্যুর পরও চর্চা বন্ধ হয়নি। নানা সময়ে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সমাজের নানাস্তরের প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ সামনে এসেছে।

 

সেই তালিকায় ধনকুবের ব্যবসায়ী, হলিউড তারকা, রাজনীতিবিদ-সহ অনেকেই রয়েছেন। ওই মামলা সম্পর্কিত নানা ফাইল, ফ্লাইটের তালিকা, কন্ট্যাক্ট লিস্ট বা যোগাযোগের তালিকা, মামলার নথি, সাক্ষীদের দেয়া বয়ান, নানা ফুটেজ- সবকিছু নিয়েই এক সঙ্গে এটিকে এপস্টেইন ফাইল বলা হয়। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন