এজবাস্টনে ইতিহাস গড়া জয়ে সিরিজে ফিরলো ভারত

৪ সপ্তাহ আগে
ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য দুঃস্বপ্নের এক নাম এজবাস্টন। এই মাঠে আগে কখনোই টেস্ট জেতেনি টিম ইন্ডিয়া। মনসুর আলী খান পাতৌদি, কপিল দেব, আজহারউদ্দিন, ধোনি-কোহলিরা যা পারেননি, তা করে দেখালেন গিল-রাহুলরা। রোববার (৬ জুলাই) ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এজবাস্টনের মাঠে প্রথমবার জয় পেলো ভারত।

আর মাত্র একটা সেশন টিকে থাকলেই হতো, তাহলেই অন্তত ঘরের মাঠে হার এড়াতে পারতো ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো কোথায়, ভারতের কাছে ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় ইংলিশরা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা। 

 

ভারতকে হারাতে হলে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে ৫৩৬ রান করতে হতো ইংল্যান্ডকে, হাতে ছিল ৭ উইকেট। এমন সমীকরণ মেলানো ছিলো প্রায় অসম্ভবই। এজবাস্টনে ড্র করার কাজটাও যে সহজ ছিল না স্বাগতিকদের জন্য।

 

৬ উইকেট হারিয়ে ৪২৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। আর তাতেই ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬০৮ রান। চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। মাত্র ১৬ ওভার ব্যাট করেই ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বসে তারা। 

 

৩ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের ব্যাটিং শুরু করেন ওলি পোপ ও হ্যারি ব্রুক। ইংল্যান্ডকে জিততে হলে গোটা দিনে করতে হতো আরও ৫৩৬ রান। তবে হাতে ছিলো মাত্র ৭ উইকেট। এমন অবস্থায় জয়ের কথা তো দূরে থাক, ড্র করাটাও তাদের জন্য কঠিন ছিলো। 

 

সাত উইকেট নিয়ে সারাদিন ব্যাটিং করার পাশাপাশি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় বসতে হতো ইংলিশদের। বাজবলের ডিকশনারিতে ড্র শব্দটা না থাকলেও চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ মার্কাস ট্রেসকোথিক বলে গেলেন, ‘যখন পরিস্থিতি বদলায়, তখন ড্রও ভালো ফল হতে পারে। আমরা এতটা বোকা নই যে ভাববো, শুধু জয় কিংবা হার- এই দুটিই শেষ কথা।’ 

 

আরও পড়ুন: শান্তর বিশ্ব রেকর্ড দখলে নেয়া সূর্যবংশী পরের ম্যাচে ২০০ করতে চান 

 

মাইকেল ভনের ভয়টা ছিলো আক্রমণাত্বক ক্রিকেটে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা স্টোকসরা সারাদিন ডিফেন্স করতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে। এসবকে অবশ্য তোয়াক্কা করলেন না স্টোকস-জেমি স্মিথরা। ইংলিশ সমর্থকদের ‘প্রার্থনায়’ বৃষ্টি এলেও সেটাতে স্বাগতিকদের চেয়ে ভারতই বেশি সুবিধা পেলো। 

 

বেন ডাকেট ও জো রুটকে আগের দিনের শেষ বিকেলেই ফিরিয়েছিলেন আকাশ দীপ। পঞ্চম দিনের সকালে ফেরালেন ওলি পোপ, হ্যারি ব্রুককে। অধিনায়ক স্টোকসও টিকলেন না বেশিক্ষণ। একের পর এক উইকেট হারালেও স্মিথ খেললেন বাজবলের সহজাত ক্রিকেটই।  

 

একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে একাই লড়াই করতে থাকেন ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটার। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৯৯ বলে ৮৮ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জয়টা প্রায় নিশ্চিত করার সঙ্গে আকাশ তুলে নেন টেস্টে প্রথমবার ৫ উইকেট। শেষের দিকে ব্রাইডন কার্সের উইকেটও নিয়েছেন আকাশ। 

 

আগের দিনের ৩ উইকেটে ৭২ রান নিয়ে পঞ্চম দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। তবে এ দিন তাদের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে দিনের চতুর্থ ওভারেই পোপের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। আকাশের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২৪ রান করা পোপ। 

 

আরও পড়ুন: ফের বিতর্কে শুভমান, ৩০০ কোটির ধাক্কা খেতে পারে ভারতীয় বোর্ড

 

একটু পরই সাজঘরে ফেরেন ব্রুকও। আকাশের ইনসাইড ডেলিভারিতে এলবিডব্লিই-এর ফাঁদে পড়ে ফেরেন তিনি। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ব্রুক আউট হয়েছেন ২৩ রানে। সকালের ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন স্টোকস ও স্মিথ। তারা দুজনে মিলে প্রথম সেশনটা ভালোভাবেই পার করছিলেন। 

 

লাঞ্চ বিরতির আগে অবশ্য তাদের জুটি ভাঙেন ওয়াশিংটন সুন্দর। দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টোকসকে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে ফেলেন এই স্পিনার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। ৭৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরতে হয় স্টোকসকে। 

 

প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটার স্মিথ একাই টানতে থাকেন দলকে। ক্রিস ওকসকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন তিনি। প্রসিধ কৃষ্ণার বাউন্সারে ওকস ফিরলে ভাঙে এই জুটিও। 

 

৭৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা স্মিথ ছিলেন তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পথেই। আকাশের শর্ট ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ওয়াশিংটনের হাতে। ৮৮ রান করেই ফিরতে হয় স্মিথকে। তাকে ফিরিয়ে টেস্টে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের দেখা পান আকাশ। 

 

শেষের দিকে কার্সের ৩৮ রান কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ভারতের হয়ে একাই ৬ উইকেট নিয়েছেন পেসার আকাশ। আর ইতিহাস গড়া জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো ভারত। প্রথম ম্যাচ ভারত হেরেছিলো ৫ উইকেটের ব্যবধানে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন