ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ স.-কে নিয়ে এক কিশোর অবমাননাকর লেখা ও ছবি শেয়ার করেছে এমন অভিযোগে শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে রংপুরের গংগাচড়ার আলদাতপুর গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন রাতেই অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে উত্তেজিত জনতা। স্থানীয়রা জানান, রাত দশটায় মিছিল নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী বেশ কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর করে একটি দল। ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নেন আত্মীয়ের বাড়িতে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। নতুন করে হামলার আশঙ্কায় দুয়েকজন পুরুষ ছাড়া অধিকাংশ বাড়ির নারী ও শিশুদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। লুটপাটের পর ঘরের অবশিষ্ট মালামাল অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন, অনেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত ১৭ বছর বয়সি ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। সোমবার সরেজমিনে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি কিশোরের চাচার বাড়িতেও কেউ নেই।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এরইমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল।
আরও পড়ুন: রংপুরে হিন্দুপাড়ায় হামলা: পরিদর্শন শেষে যা জানালো প্রশাসন ও পুলিশ
অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত নামে গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আজ সকাল থেকে শুনছি, রংপুর থেকে কারা যেন আসবে। এজন্য আতঙ্কের মধ্যে আছি। এ ধরনের হুমকিও আসছে আমাদের কাছে, “কয়দিন সেনাবাহিনী আছে আমরা দেখবো। তারপর যেদিন সেনাবাহিনী চলে যাবে সেদিন আমরা আবার যাবো”।’
একই গ্রামের বাসিন্দা এবং আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কালী রঞ্জন বলেন, ‘ওরা যখন আসে, তখন আমরা পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাই। সেই সুযোগে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও নিয়ে গেছে। ঘরে এখন কিচ্ছু নেই।’
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগের খবর পাওয়ার পর আমরা কিন্তু ওই গ্রামে গিয়ে কিশোরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। এরপর উত্তেজিত লোকজন সেখানে গিয়েছিল। আমরা তাদের নিবৃত্ত করে ফেরত পাঠিয়েছি। সেনাবাহিনীও তখন ছিল। পরদিন দুপুরে ওই কিশোরকে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়।’
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা সময় সংবাদকে বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যারা দোষী ব্যক্তি রয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ অগ্রগতি সাধন করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে ২২টি পরিবার বসবাস করে।
]]>