একসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন গ্রহণের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

৩ দিন আগে
একসঙ্গে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে বেতন গ্রহণ করেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মুসা করিম। কখনও সহকারী শিক্ষক, কখনও প্রধান শিক্ষক, আবার একই সময়ে অন্য একটি মাদ্রাসায়ও সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এছাড়া, নিয়োগপত্র ছাড়াই এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেইসে যুক্ত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সময় সংবাদের প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 

জানা গেছে, ২০১৩ সালে কুমারখালীর চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মুসা করিম। ২০১৫ সালে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। এরপর ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি মে ও জুন মাসের বেতন উত্তোলন করেন এবং ৩০ জুন পদত্যাগ করেন।

 

আবার জানা গেছে, ছেঁউরিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০২২ সালের ৬ জুলাই এমপিওভুক্ত হয়। এরপর থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকছেন তিনি। অথচ অতিরিক্ত বকেয়া বেতন তুলতে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে তার নিয়োগ ২০০৩ সাল থেকে দেখানো হচ্ছে, যা ব্যানবেইসে উল্লেখ নেই।

 

এছাড়া প্রিয়া সুলতানা নামে এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগপত্র ছাড়াই বিদ্যালয়ে যুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমেই তার নাম ব্যানবেইসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

গাড়াবাড়িয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল আলিম বলেন, ‘২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি মহম্মদ মুসা করিম আমাদের প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পাঁচ মাস তিনি নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। পরে মে ও জুন মাসের বেতন নিয়ে ৩০ জুন পদত্যাগ করেন।’

 

আরও পড়ুন: গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা, ২৩ বছর পর স্বামীর ফাঁসির আদেশ

 

সোমবার (৩০ জুন) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ছেঁউরিয়া বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা অফিসকক্ষে অবস্থান করছেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মুসা করিম মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ শুরু করেন এবং রুক্ষ ভাষায় ভিডিও ও ছবি না তোলার নির্দেশ দেন।

 

এ সময় তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ও বেতন তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নন-এমপিও হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটছিল, তাই এনটিআরসিএ নিয়োগে মাদ্রাসায় কিছুদিন চাকুরি করেছি।’ একই সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা নিয়মবহির্ভূত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নন এমপিও প্রতিষ্ঠানে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’

 

প্রিয়া সুলতানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি কিছুদিন বিদ্যালয়ে আসতেন। ভুল করে তার নাম ব্যানবেইসে চলে গেছে, এখন নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ৫ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েছি। একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরির নিয়ম নেই। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুতই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।’

 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ‘একই ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার সুযোগ নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবুও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন