মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত ২০ জনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ১০ জনকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বাজিত পুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বুলবুল (২৮) মামুন (৪৫) সাকিলকে (২৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মোবারক হুসেইনকে (৪২) বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মৌটুপী গ্রামের সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ির দুই বংশের মধ্যে ৫৬ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ এবং কর্তাবাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হক।
দুই বংশের দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত খুন হয়েছে ১৪ জন। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক মামলা রয়েছে। সবশেষ সরকারবাড়ির কাইয়ুম হত্যার পর কর্তাবাড়ির লোকজন গ্রামছাড়া হয়ে যান। কয়েক মাস পর কাইয়ুম হত্যা মামলায় জামিন নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরলেও আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে বাড়িছাড়া হন কর্তাবাড়ির লোকজন।
আজ বিকেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সতর্ক প্রহরায় গ্রামে ফিরে কর্তাবাড়ির সমর্থকরা। তাদের বাড়িতে দিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যর স্থান ত্যাগ করার পরপরই সরকার শেফায়াত উল্লাহর সমর্থকরা চারিদিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালালে শুরু হয় সংঘর্ষ।
কর্তাবাড়ির পক্ষের প্রধান সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৬ বছরের ভোটারবিহীন ভোটের চেয়ারম্যান সেফায়াত উল্লাহ চারটি হত্যা মামলা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিনটি মামলার পলাতক আসামি। তিনি এবং তার ভাই ও তার ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় আমার লোকজন বাড়িতে ঢুকতে পারছে না। আজ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় আমার পক্ষের লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর সেফায়াত উল্লাহর লোকজন চারিদিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালায়। এতে আমাদের ২৫ জন আহত হন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যতক্ষণ সেফায়াত উল্লাহ গ্রেফতার না হবে ততদিন এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন, আহত ৪
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার জেরিন পারভিন বলেন, ‘বিকেল ৫টার পর থেকে মৌটুপীর সংঘর্ষে ২০ জন আহত রোগী আমাদের হাসপাতালে আসে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফুয়াদ রোহানী বলেন, ‘উত্তেজনার খবরে আমরা সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মৌটুপীতে ছিলাম। বিকেল ৩টার দিকে আমরা চলে আসার পর একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালালে আবারও সংঘর্ষ বাঁধে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় শান্ত রয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
]]>