একই মামলা নিয়ে প্রশাসনের এ দ্বিমুখী আচরণে ক্যাম্পাসে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক শেখ মাজেদুল হক মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে সব নিয়ম অনুসরণ করে শিক্ষা ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া সিন্ডিকেট সভায় তার এই শিক্ষা ছুটি আটকে দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও হত্যার চেষ্টার মামলা থাকায় তার এই ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। তবে একই মামলায় ইইই বিভাগের শিক্ষক মনিরুল ইসলামের নাম আসামির তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তাকে নতুন করে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়ায় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
জানা যায়, বর্তমান প্রক্টর এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. ফেরদৌস রহমানের আস্থাভাজন ও একই বিভাগের হওয়ায় প্রক্টরের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও মো. মনিরুল ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফলাফল জালিয়াতি করে হলেন বেরোবির শিক্ষক, প্রমাণ মিলল শিক্ষা বোর্ডে
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলনে রংপুর শহরে আহত মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ১৪০ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৩৩ নাম্বার আসামি হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া সহকারী প্রক্টর ও ইইই বিভাগের শিক্ষক মনিরুল ইসলামের নাম রয়েছে এবং ৭৩ নাম্বারে আসামি হিসেবে শিক্ষা ছুটি আটকে দেয়া আরেক শিক্ষক মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হকের নামও আছে।
তবে একই মামলায় নাম থাকায় একজনের ছুটি আটকে দিয়ে অন্য শিক্ষককে নতুন প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনের ওপর দাঁড়িয়ে বর্তমান প্রশাসন কীভাবে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলার একজন আসামিকে সহকারী প্রক্টরের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারে? আবার একই মামলার আসামি অন্য এক শিক্ষকের শিক্ষা ছুটি আটকে দেয়, এটা প্রশাসনের দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
আরও পড়ুন: ফরেনসিকে যাচ্ছে বেরোবি শিক্ষকের ফাঁস হওয়া সেই অডিও
মামলার এজাহারে শহিদুল উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ৮০০ থেকে ১০০০ ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রংপুর শহরের টাউন হলের মোড়ে সমবেত হয়। সেখানে উল্লেখিত আসামিরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালালে শহিদুল আহত হন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজে ১০ দিন চিকিৎসা দেয়ার পর তিনি সুস্থ হন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
জুলাই মামলার আসামিকে কেন সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘মামলাটা তো ভুয়া। মামলার বাদী বলেছে এরা জড়িত না। বাদী অ্যাফিডেভিট করে দিয়েছে। এ জন্য আমরা তাকে রেখেছি।’
জুলাই মামলার আসামিকে কেন সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রক্টর তার সহকারী প্রক্টর পছন্দ করেন। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’