এক বিয়ে নিয়ে দুইপক্ষের ১৯ মামলা, তবুও সমাধান নেই!

২ সপ্তাহ আগে
রাজশাহীতে এক বিয়ে নিয়ে দুইপক্ষের ১৯ টি মামলার হওয়ার পরেও বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না। সম্প্রতি আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন ভুক্তভোগী রিংকু। সংস্থাটি নোটিশ করে উভয়পক্ষকে ডাকে।

বিয়ের আগে এবং বিচ্ছেদের পরে মামলাগুলো হয়েছে। রাজশাহীর ছাপাখানা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ রিংকু (২৮) দাবি করেছেন, তার সাবেক স্ত্রী প্রিয়া খাতুন (২১) মামলা করেছেন ১২টি। আর প্রিয়া জানিয়েছেন, রিংকু তার নামে মামলা করেছেন ৭টি। যদিও পাঁচটি মামলা করার কথা স্বীকার করেছেন রিংকু।


ব্যবসায়ী রিংকুর বাড়ি রাজশাহী নগরের ডিঙ্গাডোবা মহল্লায়। রাজশাহীর নিউমার্কেট-ষষ্ঠীতলায় তার ছাপাখানার ব্যবসা আছে।


আর প্রিয়া খাতুনের বাবার বাড়ি দামকুড়া থানার জোতরাবন (ধুতরা বন) গ্রামে। তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। তার দেওয়া মিথ্যা মামলায় হয়রানি হচ্ছেন দাবি করে রোববার দুপুরে রিংকু নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে রিংকু দাবি করেন, প্রিয়া তাকে ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আসামি করছেন। তারা ২৫টি পরিবার ভুক্তভোগী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।


আরও পড়ুন: যশোরে ১৬৭ আওয়ামী লীগ নেতার আত্মসমর্পণ, জামিন পেলেন কতজন?


সংবাদ সম্মেলনে রিংকু জানান, প্রিয়াকে আগে তিনি চিনতেনই না। হঠাৎ ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি একটি ফোন পান। প্রিয়া তাকে প্রিন্টিংয়ের কাজ নেওয়ার জন্য রাজশাহী কলেজে ডাকেন। তিনি গেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তা নাকচ করে চলে আসেন। এরপর ২০১৯ সালের জুনে ভুয়া কাবিননামা নিয়ে বাড়ি চলে আসেন প্রিয়া।


তখন তাকে মেনে নেওয়া না হলে প্রিয়া আদালতে যৌতুকের মামলা করেন। বাধ্য হয়ে রিংকু জাল কাবিননামা তৈরির অভিযোগে প্রিয়ার নামে মামলা করেন। পরে একদিন প্রিয়া ছাপাখানায় যান এবং কীটনাশক পান করেন। পরে কীটনাশক পান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে প্রিয়া মামলা করেন। এই মামলার পর তিনি উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েন।


আপসের স্বার্থে তিনি ২০২০ সালে প্রিয়াকে বিয়ে করেন। ইতোমধ্যে রিংকুর দায়ের করা মামলায় প্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে উঠে আসে, প্রিয়া প্রথমে জাল কাবিননামা দিয়ে যৌতুকের মামলা করেছিলেন। তবে প্রিয়াকে বিয়ে করে নেওয়ার কারণে রিংকু ওই মামলাটি তুলে নেন। তারপর দুজনে সংসার করছিলেন। ২০২১ সালের দিকে তাদের একটি পূত্র সন্তান হয়। মুনতাসুজ্জামান প্রিন্স নাম রাখা হয় তার। প্রিন্সের বয়স এখন ৩ বছর।


আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দল নিয়ে নির্বাচন হবে, তারা ফিরবে বিচারের পর: আব্দুস সালাম

রিংকু বলেন, বিয়ের পর জানতে পারেন ফজলে রাব্বী নামের একজনের সঙ্গে প্রিয়ার বিয়ে হয়েছিল। বনিবনাও হচ্ছিল না। তাই গত বছরের ডিসেম্বরে কাজী অফিসের মাধ্যমে তিনি প্রিয়াকে তালাক দেন। এর পর থেকেই একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়া। মোট মামলা করেছেন ১২টি। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট প্রথম মামলাটি করেছিলেন প্রিয়া। দ্বিতীয় মামলাটি ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর করেন। পরে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি মামলা করেন। এরপর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি, ৩০ জানুয়ারি, ৫ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল, ৬ মে, ২০ মে, ১৯ আগস্ট, ৫ সেপ্টেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর একটি করে মামলা করেছেন প্রিয়া।


রিংকু আরও বলেন, এসব মামলায় তাকে ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি মামলা করা হয়েছে। একই রকম ঘটনা দেখিয়ে কখনও আদালতে, কখনও বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সব মামলা মিথ্যা। ইতোমধ্যে চারটি মামলা আদালতে খারিজ হয়েছে। অন্য ৮ মামলায় ২৫টি পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি জানান, এক মামলায় জামিনের আগেই নতুন মামলা হচ্ছে।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়া খাতুন বলেন, জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ ঠিক না। রিংকুর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। পরে মামলা-মোকদ্দমা হলে আদালতের নির্দেশেই বিয়ে করেন। কিন্তু রিংকু মাদকসেবন করেন। বন্ধুর বউকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যান। ফলে তাদের দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এখন রিংকু তার নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।


প্রিয়া দাবি করেন, রিংকুও তার নামে ‘ডজনখানেক’ মামলা করেছেন। এর মধ্যে সাতটি মামলার তারিখ জানাতে পারেন প্রিয়া। তার দেওয়া তথ্যমতে, বিয়ের আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন প্রথম মামলা করেন রিংকু। বিচ্ছেদের পর ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর; চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি, ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ৫ জুলাই এই ৭ মামলা করেন রিংকু।

আরও পড়ুন: ছাদে ককটেল শুকাতে গিয়ে বিস্ফোরণ: আহত সেই আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যু

প্রিয়া বলেন, ‘আমি নাকি তাকে শুধু মারধর আর হুমকিই দিই। এসব অভিযোগে মামলাগুলো করেছে।’ জানতে চাইলে রিংকু বলেন, ‘আমি মামলা করেছি ৫টি। এরমধ্যে দুটি চলমান। প্রিয়া ১২টা মামলা করার কথা বললেও কাগজ দেখাতে পারবে না। আমি ৫টা মামলাই করেছি।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন