এইচ-১বি ভিসা: প্রতিভার মূল্যায়ন না মার্কিনিদের বেতন কমানোর ফন্দি?

৫ দিন আগে
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক এক সময় এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। আর এখন তিনি দেশটিরই বৈধ নাগরিক। তার জন্ম আদতে দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের প্রথম মেয়াদে এইচ-১বি ভিসা সীমিত করার ঘোষণা দিলেও তা থেকে সরে এসে অন্যতম আস্থাভাজন ইলন মাস্কের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে এই ভিসার সাফাই গেয়েছেন।

এ নিয়েই আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে মার্কিন রাজনীতিতে। এবার ট্রাম্পকে এক হাত নিচ্ছেন তারা। প্রশ্ন তুলছেন, এইচ-১বি ভিসা প্রতিভার মূল্যায়ন না মার্কিনিদের বেতন কমানোর ফন্দি?

 

এইচ-১বি ভিসা কী?

এইচ-১বি ভিসা হলো একটি অস্থায়ী মার্কিন কাজের ভিসা যেটির মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, অর্থ এবং ওষুধের মতো খাতে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন বিদেশি পেশাদার কর্মীদেরদের নিয়োগের অনুমতি দেয় এই ভিসা। এইচ-১বি ভিসা প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য দেয়া হয়। এটি সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। বিশেষ ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান আবার গ্রিন কার্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিকত্বের সুযোগও পাওয়া সম্ভব এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে।

 

আবেদন প্রক্রিয়া

প্রতি বছর, মার্কিন সরকার ৬৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভান্স ডিগ্রি নেয়া আরো ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এই ভিসার সুযোগ রাখা হয়েছে। সাধারণত এইচ-১বি ভিসার আবেদনের জন্য প্রার্থীদের ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস বা ইউএসসিআইএস এ অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে জয়ীদের নির্বাচন করা হয়। লটারিতে জেতার পর স্পন্সরকারী নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিতে হয়।

 

প্রোগ্রামটি মূলত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। প্রতি বছর হাজার হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যবহার করে তারা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার অন্যতম মাধ্যম এই ভিসা। ২০২৪ সালেও ইলন মাস্কের টেক জায়ান্ট টেসলায় ৭২৪ কর্মী এ ভিসায় কাজ পেয়েছেন।

 

আরও পড়ুন: ট্রাম্প-সমর্থিত মাইক জনসন স্পিকার পদে পুনর্নির্বাচিত

 

এইচ-১বি বিতর্কের শুরু

এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইচ-১বি ভিসার কারণে ব্যবসা-কাজ মার্কিনদের বদলে কম মজুরির বিদেশি কর্মীদের দখলে চলে যাচ্ছে এমন যুক্তি দেখিয়ে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে এই ভিসা কর্মসূচির বিপক্ষে অবস্থান নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালে এই প্রোগ্রামে কিছু কঠোর বিধিনিষেধও আরোপ করে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন।

 

সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রশাসনে ভারতীয়-মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা শ্রীরাম কৃষ্ণাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সমালোচনা করেন ডানপন্থি নেত্রী লরা লুমার। কৃষ্ণা দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার পক্ষে। এছাড়া নতুন প্রশাসনে ইলন মাস্ক এবং ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীকে সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প।

 

রামাস্বামী সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি গড়পড়তা মানকে উৎসাহিত করছে। নতুন প্রজন্মকে আবারও কঠোর পরিশ্রম ও মেধার ওপর জোর দিতে হবে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর এতেই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। এক সময় বিরোধিতা করা ট্রাম্প বর্তমানে এই ভিসা কর্মসূচির পক্ষে অবস্থান নিলেও বিরোধ দেখা দিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সমর্থদের মাঝে। কেননা দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েই কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।

 

অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি আরও কঠোরভাবে অভিবাসন দমন করতে মার্কিনদের জন্য বেশি কাজের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রিপাবলিকান এই নেতা। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব নিতে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হঠাৎ করে এই ভিসার পক্ষে মতামত দেয়ায় ক্ষোভে ফুসছেন কট্টর ডানপন্থিরা যারা অভিবাসনের বিপক্ষে।

 

ট্রাম্প সমর্থকদের অনেকে মার্কিন শ্রমিকদের জন্য এই ভিসাকে একটি বোঝা হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ইলন মাস্ক এইচ-১বি ভিসার পক্ষে কথা বলছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাস্ক বলেন, ‘এইচ-১বি ভিসা নিয়ে তিনি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। এ কারণেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং এর মাধ্যমেই স্পেসএক্স, টেসলার মতো শত শত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।’

 

আরও পড়ুন: চীনকে ঠেকাতেই কি পানামা খাল দখলে নিতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প?

 

দক্ষকর্মী ভিসা এইচ-১বি নিয়ে বিতর্কেও মাস্কের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ট্রাম্পও। তিনি জানান, তিনি সবসময় এইচ-১ বি ভিসা পছন্দ করেন, তিনি সবসময় এই ভিসার পক্ষে ছিলেন। যদিও ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এইচ-১বি ভিসা সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর আরো ফুসে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীবিরোধীরা।

 

তারা সমালোচনা করে বলছেন, এই ভিসায় কর্মীদের বেতন বাৎসরিক ২ লাখ ডলার বা তারও কম। এই নিয়োগ প্রতিভাবানদের মূল্যায়ন নয় বরং মার্কিন কর্মীদের বেতন কমিয়ে রাখার একটি ফন্দি। ট্রাম্পের মিত্র ও আস্থাভাজন স্টিভ ব্যানন এইচ-১বি ভিসা সমর্থনের জন্য ইলন মাস্কের সমালোচনা করেছেন এবং অভিবাসনকে পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।

 

এইচ-১বি ভিসার সুবিধা

এইচ-১বি ভিসা শ্রমিক এবং নিয়োগকর্তা উভয়ের জন্যই বেশ কিছু সুবিধা দেয়। মার্কিন নাগরিকদের সমানই বেতন ও কাজের পরিবেশ পান নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স বা পারমিটের জন্য কর্মীদের অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা কোন কারণে কাজে নিয়োগ দিতে বিলম্ব করলে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। নিয়োগকারীরা এই ভিসা প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিভাধরদের নিজেদের করে নেয়ার সুযোগ পায়।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন