দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা আর গাদাগাদি করে যাত্রা, রাজধানীবাসীর মেট্রোযাত্রার দৈনন্দিন গল্প এখন এমনই। দিনদিন বাড়ছে যাত্রীচাপ। তবে এত যাত্রীর ভিড়েও কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছে না মেট্রো-ফলে যথা সময়ে ঋণ পরিশোধের শঙ্কা কাটছে না।
বর্তমানে দিনে গড়ে উড়াল এই রেলপথ ব্যবহার করছেন চার লাখের বেশি যাত্রী। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এর থেকে বছরে আয় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। বিপরীতে জাইকার কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষকে। কোম্পানিটির সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের নির্মাণকালীন ১০ বছর পর্যন্ত জাইকার ঋণের মূল কিস্তি দিতে হয়নি, যা গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালের জুন থেকে সীমিত আকারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকার মতো পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি বছর আরও ১০ কোটি টাকা শোধ করতে হবে।
তবে আগামী বছরের মে থেকে পরিশোধ করতে হবে বড় অঙ্কের ঋণ। সব মিলিয়ে তখন থেকে পরবর্তী এক বছরে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকার কিস্তি। ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, এরপর পর্যায়ক্রমে ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ আরও বাড়বে। ২০৩০-৩১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এমআরটি-৬ নির্মাণে নেয়া ঋণের কিস্তি হিসেবে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ এ সময়ে গড়ে বছরে ৭৪০ কোটি টাকা ঋণের কিস্তি বাবদ পরিশোধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ট্রেন-মেট্রোরেলে শিক্ষার্থী ও দাঁড়ানো যাত্রীদের হাফ ভাড়া চেয়ে রিট
এমন পরিস্থিতিকে শঙ্কার উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু যাত্রীদের থেকে আয়ের ওপর নির্ভর করে ঋণ পরিশোধ অসম্ভব। আয় বাড়াতে ট্রেনের সংখ্যা ও বেশি সময় চালানো, পরিচর্যা খাতে অযৌক্তিক খরচ কমানোর পাশাপাশি স্টেশন ও অবকাঠামো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। বিনিয়োগ বেশি হওয়াতেই ঋণের চাপ ভোগাচ্ছে মেট্রোরেলকে।
পরিবহন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল হক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমরা মেট্রো নির্মাণে এত বেশি সময় নষ্ট করেছি, যার ফলে খরচও বাড়িয়ে ফেলেছি। এই অতিরিক্ত খরচ এখন মূলত যাত্রীর ভাড়ার ওপর নির্ভর করছে। আধুনিক যাত্রীসেবায় মেট্রো শুধু যাত্রীর ভাড়ার ওপর নির্ভর করে না। যদি সময়মতো এবং পেশাদারভাবে কাজ করা হতো, খরচ অনেক কম হতো। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও সোলার এনার্জি বা অন্যান্য বাণিজ্যিক উপায় থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেত। স্মার্ট উন্নয়নে কোনো ভর্তুকি প্রয়োজন হয় না।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্টেশন অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহারসহ কর্তৃপক্ষ আয় বাড়ানোর যেসব পরিকল্পনা করছে তা দিয়ে কিস্তি পরিশোধ সম্ভব বলে দাবি তার। যদিও কত সময় লাগবে কিংবা কতটুকু ঘাটতি থাকবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই তার কাছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নন-রেভিনিউ উৎস, যেমন বিজ্ঞাপন, টিকিটিং, ব্যাংকের বুথ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন ট্রানজিট-ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট করার চেষ্টা চলছে। অস্থায়ীভাবে জায়গা ব্যবহার বা দোকান ভাড়া দিয়ে আয় হলে, আগামী বছর থেকে কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে ভালো ধারণা দেয়া সম্ভব হবে। তবে এখন পর্যন্ত শুধু সুদের অর্থ দিতে পারছি।’
]]>