উৎসবের আমেজে কেনাবেচা চলছে ফরিদপুরের পশুর হাটে

২ সপ্তাহ আগে
ঈদুল আজহার আর মাত্র বাকি দুই দিন। ফরিদপুরের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের জমজমাট বেচাকেনা। চারপাশে গরুর ডাক আর মানুষের হাক ডাক। চলছে দর কষাকষি, দরদামে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। দরদাম ও উৎসবের আমেজে মুখরিত হাটে চলছে বেচাকেনা।

বুধবার (৪ জুন) শহরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের গরু এনেছেন বেপারী ও খামারিরা। ৫০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে গরু। তবে বিক্রেতারা বলছেন দাম কম পাচ্ছেন তারা, আর ক্রেতারা বলছেন এবছর গরু নাগালের মধ্যেই রয়েছে।


এদিকে বিকেলে সিঅ্যান্ডবি গরুর হাট পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিলসহ কর্মকর্তারা। জেলায় চলতি বছর কোরবানি পশু বিক্রির জন্য ৪০টি স্থায়ী হাট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অস্থায়ী হাট। হাটগুলোতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। জাল টাকা শনাক্তে বসানো হয়েছে মেশিন। এছাড়া রয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে এই পশুর হাট।


গরু বিক্রি করতে আসা আশরাফ হোসেন বলেন, ‘একটি গরু নিয়ে হাটে এসেছি, দাম চাচ্ছি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দাম উঠেছে ১ লাখ ৮০ হাজার পর্যন্ত। এবছর গরু বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হবে। গরু লালন পালন করতে অনেক খরচ হয়েছে। বিশেষ করে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনেও খরচ বেশি হয়েছে। দাম আশানুরুপ হচ্ছে না।’

 

আরেক বিক্রেতা শরীফ হোসেন বলেন, ‘গরু বিক্রি করেছি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। দাম চেয়েছিলাম দেড় লাখ টাকা। সারা বছর গরু পালন করে বিক্রি করলাম, কিন্তু এবছর দাম ভালো পেলাম না।’

আরও পড়ুন: সুস্থ গরু কীভাবে চিনবেন?

গরু কিনতে আসা শহীদ মোল্লা বলেন, ‘এখনও গরু ক্রয় করিনি। হাটে এসেছি, দেখছি দামদর করছি। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবছর দাম কম মনে হচ্ছে। আমার বাজেট ১ লাখ টাকা, এর মধ্যেই কিনব।’


আরেক ক্রেতা আকবর শেখ বলেন, ‘একটা গরু কিনলাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। ওজন হবে প্রায় ৮ মণ। দাম কমেই পেয়েছি। গত বছরের চেয়ে দাম কমেই কিনতে পেরেছি।’


হাটের ইজারাদার মনিব হাসান সোহাগ বলেন, ‘ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই হাটে এসে খুশি। আমরা হাসিল নিচ্ছি সহনশীল, একারণে ক্রেতা বিক্রেতা আসছে। বিশেষ করে দূর দূরান্ত থেকে যে সকল বেপারী ও খামানি আসছেন, তারা নিশ্চিন্তে তাদের পশু বেচাকেনা করতে পারছে। কোনো ধরনের ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।’


হাট পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল জানান, কোরবানির হাটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি হাটেই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশও রয়েছে। বিশেষ করে হাট এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


তিনি আরও জানান, দূর দূরান্ত থেকে যেসকল বেপারী ও খামানিরা আসছেন তারা যাতে করে তাদের পশু বিক্রি করে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এছাড়া পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তে মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রতিটি হাটে।

আরও পড়ুন: এবার কোরবানির হাট মাতাবে ‘টাইগার বিষু’ ও ‘নবাব’

ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস জানান, হাটে আসা গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কোনো রোগাক্রান্ত গরু যাতে হাটে বিক্রি করা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে সার্বক্ষণিক। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে জেলায় ৪০টি গরুর হাট বসানো হয়েছে। আর ১৮ টি হাটে স্থাপন করা হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প।


তিনি আরও জানান, এবছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় গবাদী পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ১১টি। চাহিদার থেকেও উদ্বৃত্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৮০ টি। জেলায় এবছর কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯১টি গবাদি পশু।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন