উপকূলে চলছে হতাশা আর ক্ষতির হিসাব-নিকাশ

১ দিন আগে
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সমুদ্রে থাকা শত শত ট্রলার ফিরেছে কক্সবাজার উপকূলের ঘাটে। তবে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েও ইলিশ শূন্য খালি হাতে ফিরেছেন জেলেরা। তাই উপকূলজুড়ে এখন চলছে হতাশা আর ক্ষতির হিসাব-নিকাশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর ঘাটে নোঙর করা সারি সারি ট্রলার। সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় ঘাটে ফিরেছেন শত শত মাছ ধরার ট্রলার। তড়িঘড়ি করে ফিরে আসায় ট্রলারে নেই তেমন মাছ। মাছ ধরা বন্ধ, তাই থমকে গেছে আয়ের পথ। এতেই ঘাটে বসে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন জেলেরা। তারা বলছেন, উপার্জন নেই, কিভাবে চলবে সংসারের খরচ।


জেলে আবুল হোসেন বলেন, বার বার সংকেত দেখা হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে সাগরে গেলেও মাছের দেখা মিলছে না। জাল ফেললেও ধরা পড়ছে না ইলিশ। মাছ নেই তাই টাকাও নেই। কিভাবে সংসার চলবে এই চিন্তায় ঘাটে বসে আছি। বেশি কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মিয়ানমার থেকে ট্রলারে ২০ রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিনে

আরেক জেলে মিশু দাস বলেন, ‘সাগরের আবহাওয়া খারাপ। এর মাঝেও সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু জাল ফেলেও মাছ ধরা পড়ছে না। ৮ দিন সাগরে ছিলাম, এরপর সতর্ক সংকেত দেয়ায় ঘাটে ফিরেছি। ১৯ জন জেলে সাগরে গিয়ে মাত্র ৬০টা ইলিশ পেয়েছি। এখন সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। আগামী ৮-১০ এভাবে ঘাটেই বসে থাকতে হবে আবহাওয়ার কারণে।’


শুধু জেলেরা নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরাও। তারা বলছেন; তেল, বরফ, কর্মচারীদের বেতন সব দিতে হচ্ছে, কিন্তু মাছ তো পাওয়া যাচ্ছে না।
 

ট্রলার মালিক বশির আহমদ বলেন, ‘৪ লাখ টাকা খরচ করে জেলেদের সাগরে পাঠিয়েছি। কিন্তু ৫ দিন সাগরে মাছ শিকার করে ৫০টি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছে জেলেরা। যা বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা পেয়েছি। এভাবে আর কত লোকসান দিতে হবে বুঝতে পারছি না। এভাবে হলে ট্রলারের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।’


আরেক ট্রলার মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘৫৮ দিন বন্ধের পর বেশ কয়েকবার জেলেদের সাগরে পাঠিয়েছি। কিন্তু ২-৩ দিন সাগরে মাছ ধরার পর সতর্ক সংকেতের কারণে ঘাটে ফিরে আসতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে।’


কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সমবায় সমিতির সদস্য আজাদুর রহমান বলেন, ‘৫ হাজারের বেশি ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিল। তারা ৭ থেকে ৮ দিন সাগরে মাছ শিকার করেছে। কিন্তু সাগরে মাছের দেখা মিলছে না। এক একটা ট্রলার ২০ থেকে ৬০ টার মতো ইলিশ পেয়েছে। তার ওপর আবহাওয়া খারাপের কারণে ঘাটে ফিরে আসতে হয়েছে। কি কারণে সাগরে মাছ মিলছে তা বুঝা যাচ্ছে না। খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে ট্রলার মালিকদের। এখন সতর্ক সংকেত দেয়ায় সব ট্রলার ঘাটে নোঙর করেছে।’

আরও পড়ুন: হাতিয়ার সঙ্গে বন্ধ সারাদেশের নৌ চলাচল

এদিকে বঙ্গোপসাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।


কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম তাই স্বাভাবিকভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। এই অবস্থায় যদি জেলেরা সাগরে যায় তাহলে দূর্ঘটনায় কবলিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সতর্ক সংকেত কিংবা সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত জেলেদের ধরার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে হবে ট্রলার মালিকদের। তারা যেন কোনোভাবেই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেলেদের সাগরে না পাঠায়।’


কক্সবাজারে মাছ ধরার নৌযান রয়েছে ৬ হাজারের বেশি। এসব নৌযানে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখেরও বেশি জেলে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন