উড়ন্ত বিমানের দিকে ফুটবলে শট, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

২ সপ্তাহ আগে
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উড়ন্ত বিমান লক্ষ্য করে এক পর্যটকের ফুটবলে শট দেয়া একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেকজনের একেক মন্তব্যের পোস্টকে কেন্দ্র করে চলছে সমালোচনা।

এদের কেউ বলছেন, ফুটবলটা ভাগ্যক্রমে আঘাত না লাগায় বিমানটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। আবার কেউ বলছেন, সৈকত ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, খেলার মাঠ নয়; বিমান লক্ষ্য করে ফুটবল ছুড়ে মারার নিছক ঘটনার চাইতে সৈকতের শৃংখলা আনা জরুরি। তবে এ নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রটি মোবাইলে ধারণের কারসাজিতে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। সৈকতের যে স্থানে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তাতে কোনো পেশাদার ফুটবলারের পক্ষেও লাথি মেরে উড়ন্ত বিমান স্পর্শ করা সম্ভব নয়। তারপরও কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন সৈকত এলাকায় ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানো এবং রাতের বেলায় বিমান লক্ষ্য করে লেজার লাইট মারা খুবই বিপজ্জনক বলে মন্তব্য তাদের।


কক্সবাজার সৈকতের সীগাল পয়েন্ট; যেখানেই ঘটেছে ফুটবল ছুড়ে মারার ঘটনা। মাত্র ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈকতে ঘুরতে আসা এক পর্যটক যুবক গোসলের পাশাপাশি সাথে থাকা ফুটবল নিয়ে সাগরের পানিতে খেলছেন। এসময় সৈকতের উপর দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য একটি বিমান উড়ে যাচ্ছিল। আর সাথে সাথে ওই পর্যটক যুবক হাতে থাকা ফুটবলকে লাথি মারেন। ভিডিওতে দেখা যায়, ফুটবলটি বিমানটি ছুঁতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা কোনো ব্যক্তি মোবাইলে সেই চিত্র ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও চিত্র ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে।


ভিডিওর ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে মোবাইলে আলাপের সময় যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে সৈকতের যে স্থানে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে- ওই স্থানে বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য যত উঁচুতে বিমান অবস্থানের কথা সেই অবস্থানে বলে লাথি মেরে বিমান স্পর্শ করার কোনো সুযোগ নেই। ওই অবস্থানে বিমানটি অন্তত ১ হাজার ফুটের বেশি উঁচুতে থাকার কথা।


ঘটনার ব্যাপারে কথা হয় জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় মাসুদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তেরই পেশাদার ফুটবলারই হোক না কেন কারও পক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ ফুটের বেশি উঁচুতে লাথি দিয়ে ফুটবল তোলা সম্ভব নয়। এ কারণে ১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ন্ত বিমানকে বল মেরে স্পর্শ করা অসম্ভব ব্যাপার। ঘটনাটিকে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করার কারসাজি বলে তিনিও মন্তব্য করেন।


ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় শৃংখলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় সচেতন মহল।


কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম. আব্দুল মান্নান বলেন, সমুদ্র সৈকত এলাকা খেলার কোনো জায়গা নয়। পর্যটক আনাগোনা স্থলে ফুটবল নিয়ে খেলার কারণে বিভিন্ন সময়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সৈকতে ফুটবল খেলা নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানো, আতশবাজি ফুটানো এবং রাতের বেলায় বিমান লক্ষ্য করে লেজার লাইটের আলো ছুড়ার মতো তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ জরুরি। নইলে আগামী জুলাইয়ে আন্তর্জাতিকমানে রূপ নিতে যাওয়া কক্সবাজার বিমানবন্দর নিয়ে বহির্বিশ্বে অপপ্রচার ছড়াবে।


তবে ঘটনাটি মোবাইলে ধারণের কারসাজির কারণে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সংশ্লিষ্টরা।


ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক তপন তালুকদার বলেন, সৈকতের সবকটি পয়েন্টে পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি শৃংখলা রক্ষায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে বিপুল সংখ্যক পর্যটককে অনেক সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। ক্ষেত্র বিশেষে পর্যটকরাও নির্দেশনা অমান্য করায় অনেক সময় বিশৃংখলা হয়।


কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, যে কোনো বিমানবন্দর থেকে বিমান উড্ডয়নের সময় ১ হাজার ৪০০ ফুট উঁচুতে এবং অবতরণের সময় অন্তত ১ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থান করে। আর সমুদ্র সৈকতের যে স্থানটিতে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সেটা বিমানবন্দর থেকে অন্তত ৩ কিলোমিটার দূরে। তাই কোনোভাবেই লাথি মেরে উপরে উঠানো ফুটবলের বিমান স্পর্শ করা সম্ভব নয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন