স্থানীয় সময় শনিবার (৫ মার্চ) সকালে ২৫ সেকেন্ডের সাদাকালো ভিডিওটি প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এরপর মুহূর্তেই এটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ কোটিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি কোনো ড্রোন বা নজরদারি বিমান থেকে ধারণ করা বলে মনে হচ্ছে।
তাতে দেখা যায়, একটি মরু এলাকায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি বৃত্তাকারভাবে জড়ো হয়েছেন। তারা কোনো একটি বিষয় আলোচনা করছেন। এর মধ্যেই সেই সমাবেশের ওপর বোমার বিস্ফোরণ ঘটল। বিস্ফোরণের পর জায়গাটি কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল।
ভিডিওটির ক্যাপশনে ট্রাম্প লেখেন, ‘হুতি যোদ্ধারা জড়ো হয়ে পরিবর্তী হামলার পরিকল্পনা করছিল।’ যদিও হামলার স্থানের কথা কিংবা হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেননি তিনি। শুধুমাত্র তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি লিখেন, ‘উফ, আর কোনোদিন হামলা চালাতে পারবে না এই হুতিরা। তারা আর কখনও আমাদের জাহাজ ডোবাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাক
মধ্যপ্রাচ্য সামরিক অভিযান তত্ত্বাবধান করা মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড ভিডিওটি প্রকাশ করেনি। এমনকি গত ১৫ মার্চের পর থেকে ইয়েমেনে পরিচালিত হামলা সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বিবরণও দেয়নি। অবশ্য হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হুথিদের লক্ষ্য করে ২০০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।
তারই একটি হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। হুতি নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা এসএবিএ জানায়, ইয়েমেনের হোদেইদা গভর্নরেটে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আয়োজিত একটি সমাবেশকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।
ইয়েমেনে গত রোববার (৩০ মার্চ) ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সংস্থাটি ঈদের দিনের আরও কিছু ছবি প্রকাশ করেছে, যাতে কয়েকজন হুতি কমান্ডারকে যোদ্ধাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়।
ওই সমাবেশে মার্কিন হামলায় কয়েক ডজন মানুষ হতাহত হয় জানিয়ে এসএবিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের হুতি ও তাদের মার্কিন ও ইসরাইলবিরোধী যুদ্ধের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: ইসরাইলের হামলা: গাজায় প্রাণহানি বেড়ে প্রায় ৫১ হাজার
তবে ইয়েমেনের হুথিবিরোধী নির্বাসিত সরকারের তথ্যমন্ত্রী মোয়াম্মার আল-ইরিয়ানি দাবি করেছেন, ওই হামলায় প্রায় ৭০ জন হুতি যোদ্ধা এবং নেতা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইরানের আধাসামরিক রেভল্যুশনারি গার্ডের বিশেষজ্ঞও রয়েছেন বলে দাবি তার। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।
ইরান সরকার বা রেভল্যুশনারি গার্ড কেউই এই হামলার কথা নিশ্চিত করেনি। হুতি নিয়ন্ত্রিত সরকারের কর্মকর্তারা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তারা বলেছেন, হুতি যোদ্ধা নয়, হামলা চালানো হয়েছে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর।
সূত্রের বরাতে এসএবিএ বলেছে, ‘আমেরিকার এই ঘৃণ্য অপরাধ...ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে আমেরিকার দেউলিয়াত্ব ও ব্যর্থতাই তুলে ধরে। এটি গাজায় ইসরাইলি-আমেরিকান গণহত্যার সম্প্রসারণ।’
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যক্ষ মদদে গত প্রায় ১৭ মাস ধরে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার জবাবে শুরু থেকেই ইসরাইল ও মার্কিন স্বার্থে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তবে গত জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির পর হামলা বন্ধ করে গোষ্ঠীটি।
আরও পড়ুন: গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন জর্ডানের রাজা
এরপর গত মাসে গাজায় ইসরাইল ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিলে আবারও তাদের হামলা শুরু হয়। প্রতিক্রিয়ায় গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে মার্কিন বাহিনী। হুতি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, মার্কিন হামলায় এখন পর্যন্ত ৯২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৬৫ জন।
তথ্যসূত্র: এপি ও মিডল ইস্ট মনিটর
]]>