ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্য হলো নিজেকে গাফলত ও উদাসীনতার অন্ধকার থেকে নিজের ভেতর ঈমানী চেতনা ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি জাগ্রত করে তোলা। হেদায়াতের আলোয় আলোকিত করে তোলা। নামাজের তাকবির যেভাবে মুসল্লিকে যাবতীয় স্বাধীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে নিয়ে যায় ঈমান ও আধ্যাত্মিকতার এক নতুন দুনিয়ায়। তেমনি ইহরাম হাজিকে নিয়ে যায় সাজসজ্জা ও আড়ম্ভরতা থেকে আল্লাহ তাআলার প্রেম ও বিশ্বাসের এক নতুন জগতে। ইহরাম হাজিকে এক পবিত্র অনুভূতি দেয় যে সে এখন চলছে মহামহিম আল্লাহর শাহি দরবারের দিকে। সরাসরি আল্লাহর সামনে সে অবস্থান করবে।
হজরত শাহ ওলিউল্লাহ রহ. লিখেছেন, ‘হজ ওমরার ইহরাম, নামাজের তাকবিরের মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। সমর্পণ, ভক্তি নিবেদন প্রকাশের এক অনন্য পন্থা। ইহরামের মাধ্যমে হাজিকে জীবনের সব রকম সাজসজ্জা, অভ্যাস ও বিলাসবহুল জীবন বর্জনে অনুপ্রাণিত ও আগ্রহী করে তোলা হয়। আল্লাহর সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা ও দীনতা ফুটিয়ে তোলা। রূপকথা প্রেম ও নিমগ্নতা প্রকাশের ব্যাপারে সাহায্য করাই হলো ইহরামের মৌলিক উদ্দেশ্য।
অনেকে জানতে চান, ইহরাম বাঁধার আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে কি?
এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ইহরাম বেঁধে ফেলার পর বৈধ অনেক কিছু হারাম হয়ে যায়। এর মধ্যে সুগন্ধি ব্যবহার অন্যতম। তবে ইহরাম বাঁধার সময় অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে ফেলার আগে শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা যায়, বরং মুস্তাহাব। এর ঘ্রাণ ইহরাম বাঁধার পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি না লাগালেই ভালো। কারণ ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষিদ্ধ, যা ইহরাম বাঁধার পরও বাকি থাকে।
ইহরাম বেঁধে ফেলার পর মাথা, চেহারা, দাড়ি, হাত, হাতের তালু, পায়ের গোছা, রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের সব জায়গায় সুগন্ধি লাগালে দম ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ হারামের সীমার ভেতরে (মিনা বা মক্কায়) কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করে তার মাংস দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে সুগন্ধি লাগালে যদি তা একত্র করলে বড় অঙ্গের সমপরিমাণ হবে বলে মনে হয়, তাহলেও দম ওয়াজিব হবে।
ইহরাম অবস্থায় কেউ যদি কাপড়ে সুগন্ধি লাগায় বা সুগন্ধি লাগানো কাপড় পরিধান করে, তাহলে সুগন্ধির পরিমাণ এক বর্গবিঘত বা তার বেশি হলে এবং পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ একদিন পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর সুগন্ধির পরিমাণ তার চেয়ে কম হলে বা পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ এক দিনের কম সময় পরিধান করলে সদকা ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা এর সমমূল্য দান করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: হজের পরিচিতি ও প্রকারভেদ
হজের দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রসুল সা.-এর তালবিয়া হলো,
لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ (উচ্চারণ: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।)
অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরিক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নে‘মত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি ১৫৪৯, মুসলিম ২৮১১)
]]>