ইসির সঙ্গে সংলাপে সাড়া দেননি অর্ধেকের বেশি আমন্ত্রিতরা

৩ দিন আগে
ভোটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের সাহস এবং সদিচ্ছার বিকল্প নেই বলে মনে করেন সুশীল সমাজ এবং শিক্ষক প্রতিনিধিরা। এদিকে, ইসির সঙ্গে সংলাপে সাড়া দেননি অর্ধেকের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইসির সংলাপে যোগ দিয়ে বক্তারা তুলে ধরেন তাদের মতামত।

 

সংলাপে আলোচকরা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব না হলে কমিশনের পদত্যাগ করার মতো সাহস থাকতে হবে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ ভোট করতে ইসি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

আরও পড়ুন: সিইসির সাথে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠক সোমবার

 

ত্রয়োদশ ‎জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে কমিশন। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমদিনে সুশীল সমাজের ৩০ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানালেও ইসির ডাকে সাড়া দেননি অর্ধেকেরও বেশি। ‎এদিন সিইসির সভাপতিত্বে ১৩ জনকে নিয়েই শুরু করতে হয় সংলাপ। প্রথম দিনে ভোটের এবং কমিশনের নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে ইসিকে স্বাধীন এবং স্বচ্ছ হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

 

অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন,

নির্বাচনকালে যদি সরকার কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করে, তা প্রকাশ্যে আনতে হবে। ইসিকে গণমাধ্যমের স্বাধীন চলাচলের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমকে অবাধ বিচরণের অনুমতি দেওয়া হলে জনগণও নির্বাচনের প্রতি আস্থা পাবে।

 

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু ভোটের দিন নয়, ভোটের আগে থেকেই কমিশনের কার্যক্রমে নিরপেক্ষতার প্রতিফলন থাকতে হবে। তাহলেই জনগণ নিশ্চিত হবে যে তাদের ভোট সঠিকভাবে গণনা হবে।

 

আরও পড়ুন: পিআর পদ্ধতিতে ভোট নিয়ে যে বার্তা দিলেন সিইসি

 

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বেগম রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 

ভোটের আগে, ভোট গ্রহণ চলার সময় ও পরে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কাছ থেকে তো প্রত্যাশা থাকবেই। বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাহলে তো তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেই। আস্থার সংকট এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ ঠিকই বুঝে পরিস্থিতি কী। সাধারণ মানুষকে অবহেলা করলে চলবে না। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী ও নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থার আহ্বান জানান।

 

‎সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কমিশনের নৈতিকতা জরুরি। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ এবং সাহস দেখানোর আহ্বান জানান বক্তরা। 

 

সাংবাদিক, কলামিস্ট ও চর্চার সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, 

এই নির্বাচনে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ব্যতয় ঘটে তাহলে কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। আগামী নির্বাচন যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং নির্বাচন নিয়ে জনগণের আকাঙ্খা তার বিপরীতে যাবে।

 

‎পরে দুপুরে শিক্ষাবিদদের নিয়ে আবারও সংলাপে বসে ইসি। এখানেও ইসির আমন্ত্রণের সাড়া দেননি অর্ধেক শিক্ষাবিদই।

 

আরও পড়ুন: নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার সব প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি: সিইসি

 

‎গণমাধ্যমের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিরা বলেন, কমিশনের সততা এবং নিরপেক্ষতার ওপর ভোটের মানদণ্ড নির্ভর করবে।

 

পরে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না নির্বাচন কমিশন। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু-সুন্দর-নিরপেক্ষ ভোট করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কমিশন।

 

তিনি আরও বলেন, আমরা এবার পুরো সংসদীয় আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছি। যদি দেখা যায় যে, কোথাও গুরুতর সমস্যা বা অনিয়ম হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করে দেব। এরপর সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পুনরায় ভোটগ্রহণ করব।

 

তিনি বলেন, 

আমরা চাই এই নির্বাচন যেন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এ জন্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক আনার প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের সংখ্যাও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনকার নির্বাচন কেবল মাঠের লড়াই নয়, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অপপ্রচার, ভুয়া তথ্য ও প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা আমরা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি। অতীতে অনেক পরামর্শ বাস্তবায়িত হয়নি—কিন্তু এবার আমরা চেষ্টা করব সেগুলো বাস্তবায়ন করার।

 

এদিকে, পূজার ছুটি শেষ হলে অক্টোবরে নারী নেত্রী, জুলাই যোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করবে ইসি।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন